তন্দ্রা বিলাস

যে কোনো ভালো অভ্যাস সামান্য চেষ্টাতেই ছেড়ে দেওয়া যায়, কিন্তু খারাপ অভ্যাস হাজার চেষ্টাতেও ছাড়া যায় না!
-তন্দ্রা বিলাস

মধ্যাহ্ন

জুলেখার ঘরে অতিথি এসেছে। আলাভোলা চেহারা, গায়ে চাদর। পরনে লুঙ্গি। রঙিলা বাড়িতে লুঙ্গি পরে কেউ আসেনা।
অতিথি বললেন, আপনার নাম কী?
জুলেখা বলল, সবার প্রথম প্রশ্ন আপনার নাম? নামের কি প্রয়োজন? আমার নাম ফুলবিবি হলে ও যা চানবিবি হলেও তা, আবার জুলেখা হলেও ক্ষতি নাই। মনে করেন আমার নাম জুলেখা। পান খাবেন? ভালো জর্দা আছে। ময়মনসিংহের সাধুবাবা জর্দা।
অতিথি বললেন, পান খাব।
জুলেখা পানদান এবং পিকদান পাশে এনে রাখল।
অতিথি বললেন, জুলেখা, শুনেছি তোমার কণ্ঠস্বর মধুর।আমি দূরদেশ থেকে এসেছি তোমার গান শুনতে। বাদ্যবাজনা প্রয়োজন নাই। খালি গলায় গান করবে, আমি শুনব। তুমি উকিল মুনসির গান ভালো জানো বলে শুনেছি। তাঁর একটি গান শোনাও।
-তাঁর গান আইজ গাব না।
-তাঁর গান গাবা না কেন?
-যেদিন আমার মন ভালো থাকে না, সেইদিন উনার গান করি।

আশাবরী

বাবার কোনো খোঁজ নেই। মাঝে মাঝে ডুব দেয়া তাঁর পুরনো অভ্যাস। বাবার ব্যবসা যখন খারাপ চলে, যখন সংসারে টাকা পয়সা দিতে পারেন না তখন উধাও হয়ে যান। তাঁকে নিয়ে আমরা তেমন চিন্তিত ও নই। কিছুদিন পর ফিরে আসেন। কিছুদিন বাইরে কাটিয়ে ফিরলেই বাবা সবাইকে নিয়ে খাওয়ার ব্যাপারটায় গুরুত্ব দিতে থাকেন। তিনি আজ বিকেলে নিউ মার্কেট থেকে কাতল মাছের বিশাল মাথা নিয়ে এলেন। সেই মাথার মুড়িঘণ্ট রান্না হল। রান্নার সময় বাবা পর্যবেক্ষকের দায়ীত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করলেন এবং মাকে নানান উপদেশ দিতে লাগলেন-"একটু ঝোল ঝোল রাখ।শুকনো হলে খেয়ে আরাম পাওয়া যাবে না। কয়কটি আলু কুচি কুচি করে কেটে দাও-আলু গলে ঝোলটা ঘন করবে, খেতে

ফ্রুট ফ্লাই

মানুষ রহস্যপ্রিয় জাতি। সে শুধু রহস্যটিই মানে রাখে আর কিছু মনে রাখতে চায় না।
-ফ্রুট ফ্লাই

পাথর

- ভাইরাসের টিকা যিনি প্রথম আবিষ্কার করেন তার নাম যেদার্স। সেটা কোনো বড় ব্যাপার নয়। একজন না একজন তো আবিষ্কার করবেনই। বড় ব্যাপার টা হচ্ছে যে, তখন এই ভাইরাসের বিষয়ে কেউ জানতোই না। সেটা তারা জেনেছেন আরো দেড়শ বছর পর।
- বলেন কি?
- পৃথিবীতে এমন সব অদ্ভুত অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে আছে ভাবি আর অবাক হই। মাঝে মধ্যে ভাবি যে এই বিপুল বসুধার কতটুকুই বা আমরা জানি?
- আরেকটা অদ্ভুত ঘটনার কথা বলুন তো শুনি।
- রেইন ফরেষ্টে একটা ড্রাইভে কিছু মানুষ আছে যারা পাপ ভক্ষণ করে। সিলিক্টার কেউ যদি মারা যায় তখন এই পাপ ভক্ষণকারীদের খবর দেয়া হয়। তারা এসে মৃত্যু দেহের চারপাশে গোল হয়ে বসে এবং কপ কপ করে ঐ মৃত ব্যক্তির পাপগুলো খেয়ে ফেলে। ফলে মৃত ব্যক্তি পাপ মুক্ত হয়ে স্বর্গে চলে যায়।
- কি আশ্চর্য কথা!
(পাথর)

কল্যাণীয়াসু

'আমার মনে হল সুখ কোন অলীক বস্তু নয়। এর জন্য জীবনব্যাপী কোন সাধনারও প্রয়োজন নেই। প্রভাতের সূর্যকিরণ বা রাতের জোছনার মতোই এও আপনাতেই আসতে পারে।'
-কল্যাণীয়াসু

নগরে দৈত্য

- রাইতে ঘুম কেমন হইছে?
- ইয়ামাস্তারিকে। ভালো হয়েছে।
- আপনার দোল তোলার স্বভাবও সুন্দর। আমারে শিখাইবেন? আমি বেন লেখাপড়া জানি। কেলাস ফাইভ পাশ। সুচির কাজও জানি। এই দেখেন!
- মেহেরি বালিয়া। ভালো হয়েছে। তুমি খুব ভালো মেয়ে। তোমার চেহারা ও সুন্দর। বিবাহ হয়েছে?
- এখনও করি নাই। অনেক সমন্ধ আসছে পছন্দ হয় না। মানুষ জাতের মধ্যে আসলে ভালো কোনো পাত্র নাই।
- ইয়ানাখিরবিসিন্তি।
- এর মানে কি?
- মানে বলা যাবে না তুমি লজ্জা পাবে।
- লজ্জা পাব কি জন্যে আপনে কি বাইরের মানুষ না কি? আপনে তো ঘরের মানুষ।
- ইয়ানাখিরিবিসিন্তি এর মানে হল তোমাকে আমার মনে ধরেছে। আমার মনে ধরছে।
- সত্য বলতে কি আপনারেও আমার মনে ধরেছে।

নগরে দৈত্য

দিনের শেষে

আজকের সকালটা এত সুন্দর কেন?
ঘুম ভাংতেই আসমানীর চোখ পড়লো আকাশে। জানালার ফাক গলে ছোট্ট একটা আকাশ, কিন্তু এ আকাশ ছোট্ট না। বিশাল আকাশ।যে কোনো বিশাল কিছুর সামনে দাঁড়ালে মন কেমন করতে থাকে। শুধু আকাশের সামনে মন কেমন করে না, কারণ আকাশ দেখতে দেখতে অভ্যেস হয়ে গেছে। তবে আজ আসমানীর মন কেমন করছে। কান্না কান্না পাচ্ছে।
ভালো ভালো মানুষগুলি যাদের হৃদয় আনন্দে পরিপূর্ণ, যারা সব সময় পৃথিবীর সবাইকে আনন্দ দিতে চায়, তাদেরকে এত সকাল সকাল পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয় কেন? ভাবতে ভাবতে আসমানীর চোখ ভিজে উঠতে শুরু করলো।
-দিনের শেষে

বহুব্রীহি

সোবহান সাহেবঃ ভালোবাসা জিনিস টা কি? তুই তোর নিজের মতো করে আমাকে একটু বুঝিয়ে বল।
কাদেরঃ ভালোবাসা হইলো গিয়া একটা শরমের ব্যাপার। যদিও এইডা শরমের ব্যাপার। তয় এইডার দরকার আছে।

নাটক-বহুব্রীহি

নিষাদ

মিসির আলি লক্ষ করলেন, লোকটি নিজেই বসার ঘরের দরজা বন্ধ করছে। ছিটিকিনি লাগানোর চেষ্টা করছে। এটাও হয়তো তার অভ্যাস। সে খুব সম্ভব তার ঘরে ঢুকেই ছিটিকিনি লাগিয়ে দেয়। তাই যদি হয়, তাহলে লোকটি থাকে একা। যে বাড়িতে অনেকগুলি মানুষ থাকে, সে-বাড়ির কেউ ঘরে ঢুকেই ছিটিকিনি লাগানোর অভ্যাস করবে না।
নিষাদ

হিমুর মধ্যদুপুর

পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বাবুর্চি ছিলেন যেমন এরিস্টটল, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি।🤔
রানু বলল, উনারা বাবুর্চি ছিলেন?
পল্টু স্যার বললেন, অবশ্যই। নিজেরা নিজের খাবার রান্না করে খেতেন। 😜
-হিমুর মধ্যদুপুর

সমুদ্র বিলাস

আমি খুবই তুচ্ছ এবং নগন্য একজন মানুষ তা ঠিক, কিন্তু তুচ্ছ নগন্য মানুষের হৃদয়ও তো বড় হতে পারে।
-সমুদ্র বিলাস

তোমাকে

কেউ যখন হাসে তার সঙ্গে সমস্ত পৃথিবীটাও হাসে। কিন্তু কেউ যখন কাঁদে তার সঙ্গে কেউ কাঁদে না। তাকে কাঁদতে হয় একা একা।
-তোমাকে

মেঘ বলেছে যাব যাব

বাস্তব কখনো গল্পের মত হয় না। তুমি কোনোদিন জানবে না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
-মেঘ বলেছে যাব যাব

পুতুল

পুতুলের শীত করছে। বেশ ভালো শীত। খোলা মাঠের উপর দিয়ে বইছে উত্তুরে কনকনে হাওয়া।পুতুল কাঁপছে ঠকক করে। সে অবশ্যি কিছু বলল না। অন্তুর গা খালি। সে কিছু বলছে না।পুতুল কেন শুধু শুধু বলবে? সে দু'টি হাত গুটিয়ে বুকের ওপর নিয়ে এসে বাতাসের ঝাপটা সামাল দেবার চেষ্টা করছে।
অন্তু অন্ধকারে ও ব্যাপারটি লক্ষ করল। মরিয়মকে সে কানে কানে কী যেন বলতেই সে তার সোয়েটার খুলে দিল।পুতুল বলল লাগবে না।মরিয়ম খিলখিল করে হেসে বলে-"শীতে

অপেনটি বায়োস্কোপ

- বড়চাচা ডরে আমার শইল কাঁপতাছে। আমি জীবনে কোনোদিন মন্দ কাজ করি নাই। অভাবে পড়ছি বইলা। এইডা বাদ দেন।
-যাও চুল আচড়াইয়া আসো!
ডর লাকতেছে?
- ডরে আমার ঠ্যাং কাঁপতেছে।
- ডরে মাইনষের কইলজা কাঁপে আর তোর কাঁপতেছে ঠ্যাং।
- কইলজাও কাঁপতেছে। কইলজা, ঠ্যাং দুইটাই কাঁপতেছে।
- ডরের কিছু নাই আমরা সন্ধান কইরা একটা বোকা কিছিমের লোক খুইজা বের করবো। তোর ভাগনী তারে গিয়া বলবে বাবা তুমি কি কর? লোকটা যাবে চমকাইয়া তোর

সৌরভ

- শুনো আইজ হইল হুদা ভাত। লবণ আর মরিচ ডলা দিয়া খাইবা। পারবা না? খাও।
- দোয়া করবো না?
- করো গো মা দোয়া কর।
- হে আল্লাহপাক তুমি যে আমাদের এতো ভালো খানা দিছ সেই জন্যে তোমার দরবারে অনেক শুকরিয়া
- আমিন

গ্রন্থঃ সৌরভ

মে ফ্লাওয়ার

গুলতেকিন আমার সঙ্গে যেতে পারছে না—তার টিকেট পাইনি। সে চলে যাবে নিউ জার্সি। আমার জন্য সেখানেই অপেক্ষা করবে। আমি নিউ অরলিন্সে এক সপ্তাহ কাটিয়ে চলে যাব তার কাছে। আমি তাকে তুলে দিতে এলাম। খুবই খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে শেষ বিদায় দিতে এসেছি। আর দেখা হবেনা। তার স্যুটকেস চেক-ইন করে দিয়েছি। সে ঢুঁকবে সিকিউরিটি এলাকায়। খুব মন খারাপ করা মুহূর্ত।
এই মুহূর্তে হঠাৎ আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে বলল, "আমার এদেশের

দরজার ওপাশে

'যে মানব সন্তান ক্ষুদ্র কামনাজয় করতে পারে, সে বৃহৎ কামনাও জয় করতে পারে।'
-দরজার ওপাশে; হুমায়ূন আহমেদ

চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক

সাইকোলজিস্টরা বলেন, খারাপ প্রকৃতির মানুষের হাতে পড়লে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। তারা যা বলে তাতেই রাজি হতে হবে। এবং চেষ্টা করতে হবে কথা বার্তা বলার। তাদের কেউ যদি বলে, আমরা এখন তোমাকে গুলি করে মারব, তখন ভয়ে অস্থির হওয়া চলবে না। ভয় খুব সংক্রামক। তোমার ভয় দেখে সেও ভয় পাবে। একজন ভীতু মানুষ ভয়ংকর কাণ্ড করে। পৃথিবীতে হত্যার স্টেটিসটিকস নিলে