ময়ূরাক্ষীর তীরে প্রথম হিমু (চতুর্থ পর্ব) হিমু হওয়ার নিয়মাবলি - হুমায়ূন আহমেদ

বইমেলার ওই ঘটনার পর আমি হিমু হওয়ার নিয়মকানুন নিয়ে ভেবেছি। কিছু নিয়ম এখানে দিয়ে দিলাম। আরও কিছু মনে এলে সংশোধনী দেওয়া হবে।

হিমু হওয়ার নিয়মাবলি :
১| বয়স আঠারোর উপর হতে হবে। আঠারোর নিচে হিমু হওয়া যাবে না। বিশেষ ব্যবস্থায় আঠারোর নিচেও হিমু হওয়া যাবে‚ তখন বাবা-মা এবং স্কুলের হেডমাস্টার সাহেবের অনুমতি লাগবে।


২| হলুদ পাঞ্জাবি বাধ্যতামূলক। শীতকালে হলুদ চাদর পরা যেতে পারে। বাংলাদেশের সীমানার বাইরের হিমুরা হলুদ পাঞ্জাবির বদলে হলুদ শার্ট বা জ্যাকেট পরতে পারবে।

৩| খালি পা বাধ্যতামূলক না। কম দামি চামড়ার স্যান্ডেল পরা যেতে পারে। শীত প্রধান দেশের হিমুরা জুতা-মোজা পরতে পারবে।

৪| প্রতি পূর্ণিমায় পূর্ণচন্দ্রের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকা বাধ্যতামূলক। মেঘ-বৃষ্টির কারণে চাঁদ দেখা না গেলে কল্পনায় চাঁদ দেখতে হবে।

৫| বৃষ্টি বাদলার দিনে ছাতা ব্যবহার করা যাবে না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যেতে হবে। ঠাণ্ডা লেগে গেলে চিকিৎসা নিতে হবে। হিমুরা শরীর ঠিক রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারে। এতে কোনো বাঁধা নেই।

৬| রাতে নির্জন রাস্তায় হাঁটার বিধান শিথিলযোগ্য। বইপত্রে দেখা যায়‚ হিমুরা সন্ত্রাসী এবং পুলিশের সঙ্গে ঠাট্টা তামাশা করে। নব্য হিমুদের এই কাজ করতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হচ্ছে। র‍্যাবের হাত থেকে শত হস্ত দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।

৭| হিমুরা কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সমর্থনকারী হতে পারবে না। তাদের একটাই নীতি হিমুনীতি‚ রাজনীতি নয়।

৮| হিমুদের জন্য সপ্তাহে দুইদিন নিরামিষ আহার বাধ্যতামূলক। বাকি দিনগুলোতে মনের সুখে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে।

ঌ| হিমুদের পাঞ্জাবিতে পকেট থাকে না। তবে কেউ যদি পকেট রাখেন তবে দোষ হবে না।

১০| হিমুরা কখনোই মানিব্যাগ ব্যবহার করতে পারবে না।

১১| তারা সব সময় হাস্যমুখে থাকবে‚ সবার সঙ্গে ঠাট্টা ফাজলামি ধরনের কথা বলবে‚ তবে পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যদের সঙ্গে কখনো না। তারা ঠাট্টা ফাজলামি বুঝে না।

১২| আদি হিমুর পিতা যেসব নীতিমালা হিমুর জন্য লিখে গেছেন সেইসব নীতিমালা নিয়মিত পাঠ করতে হবে। সেই মতো জীবনচর্যাও পরিচালিত করতে হবে।

১৩| হিমুরা কখনোই কোনো তরুণীর সঙ্গে হৃদয়ঘটিত ঝামেলায় জড়াবে না। একসঙ্গে ফুচকা খাওয়া‚ ফাস্টফুড খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

১৪| এক হিমু অন্য হিমুকে আপন ভাইয়ের মতো দেখবে।

১৫| বিশেষ বিশেষ উৎসবে‚ যেমন পহেলা বৈশাখ‚ বিজয় দিবস‚ একুশে ফেব্রুয়ারিতে সব হিমুরা একত্রিত হয়ে হিমু সঙ্গীত গাইবেন। হিমু সঙ্গীত এখনো লেখা হয়নি। সঙ্গীত লেখা এবং সুর দেওয়া হিমু গেজেটে প্রকাশ করা হবে।

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন তৈরি করেছেন শূন্য পেজ অ্যাডমিন হুমায়ূন আহমেদ

Post a Comment