"যারা কাউকে 'না' বলতে পারে না, তারা আবার কাউকে 'হ্যাঁ'ও বলতে পারে না"
-কে কথা কয়হুমায়ুন আহমেদ
"আমাদের মধ্যে সম্মান করা এবং অসম্মান করার দুটি প্রবণতাই প্রবলভাবে আছে। কাউকে পায়ের নিচে চেপে ধরতে আমাদের ভালো লাগে, আবার মাথায় নিয়ে নাচানাচি করতেও ভালো লাগে।"
-কাঠপেন্সিল; হুমায়ূন আহমেদ
পানিতে না নেমেও সাঁতার শেখা যায়। সেই সাঁতারের নাম শুকনা সাঁতার। স্থলে বেচে থাকার জন্য এই সাঁতার খুবই প্রয়োজনীয়। বেশীর ভাগ মানুষ শুকনা সাঁতার জানে না বলে স্থলে ভেসে থাকতে পারেনা।
-অপেক্ষা; হুমায়ূন আহমেদ
"একটা মেয়ের ভালবাসাকে আমি যুদ্ধের ট্যাংকের মতো মনে করি। সত্যিকার প্রেমিক-প্রেমিকা ট্যাংকের কঠিন বর্মের ভেতর থাকে। কোন চরাই-উতরাই ট্যাংককে আটকাতে পারে না"
-দিঘির জলে কার ছায়া গো; হুমায়ূন আহমেদ

সাইন্স ফিকশান সমগ্র (ভূমিকা)

উনিশ শ’ পঁয়ষট্টি সালের কথা। ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছি। বাবা-মা, ভাই-বোন ছেড়ে প্রথম থাকতে এসেছি হোস্টেলে। কিছুই ভালো লাগে না। কোনো কিছুতেই মন বসে না। দিন পনেরো অনেক কষ্টে থাকলাম। তারপর—’দূর! আর পড়াশোনা করব না’—এই ভেবে রাতের ট্রেনে রওনা হয়ে গেলাম বগুড়ায়। হাতে চটি একটা রাশিয়ান বইয়ের বাংলা অনুবাদ। বইটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর। রাতের ট্রেনে গাদাগাদি ভিড়, আলোও কম, তার ওপর এক ঘুমকাতুরে যাত্রী বারবার ঘুমের ঘোরে আমার গায়ে পড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই পড়তে শুরু করলাম—’ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ’ গল্পটি। কার লেখা এখন আর মনে পড়ছে না—শুধু মনে পড়ছে গল্প পড়ে আমি বিস্মিত, রোমাঞ্চিত ও মুগ্ধ। এ ধরনের গল্প তো আগে পড়িনি! এগুলি যদি সায়েন্স ফিকশান হয়, তাহলে এত দিন এইসব পড়িনি কেন ? একই গল্প ময়মনসিংহ পৌঁছবার আগে আগে তিন বার পড়ে ফেললাম। আমার নেশা ধরে গেল। সেই নেশা এখনো
‘মিসির আলির কথা’ শিরোনামে নিজের কথা বলে নিই আমি। তখন থাকি নর্থ ডেকোটার ফার্গো শহরে। এক রাতে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি মন্টানায়। গাড়ি চালাচ্ছে আমার স্ত্রী গুলতেকিন। পেছনের সিটে আমি আমার বড় মেয়েকে নিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছি। গুলতেকিন তখন নতুন ড্রাইভিং শিখেছে। হাইওয়েতে এই প্রথম বের হওয়া। কাজেই কথাবার্তা বলে তাকে বিরক্ত করছি না। চুপ করে বসে আছি এবং খানিকটা আতঙ্কিত বোধ করছি। শুধু মনে হচ্ছে, অ্যাকসিডেন্ট হবে না তো ? গাড়ির রেডিও অন করা। কান্ট্রি মিউজিক হচ্ছে। ইংরেজি গানের কথা মন দিয়ে শুনতে ইচ্ছে করে না। কিছু শুনছি, কিছু শুনছি না এই অবস্থা। হঠাৎ গানের একটা কলি শুনে চমকে উঠলাম—
এই যে এত লিখছি, কী বলতে চাচ্ছি এসব লেখায়? ‘চারপাশের দুঃসময়, গ্গ্নানিময় এবং রহস্যময় জগৎকে একজন লেখক গভীর মমতায় ভালোবাসেন’—এই কি আমার লেখার সার কথা ? নাকি এর বাইরেও কিছু আছে ? আমি জানি না—আমার জানতে ইচ্ছাও করে না। আমার ইচ্ছা করে—থাক। সব কথা বলে ফেলা ঠিক হবে না। কিছু রহস্য থাকুক।
শহীদুল্লাহ হল।

উপন্যাস সমগ্র—১ম খণ্ড

কুড়ি বছর আগের কথা।
বর্ষার রাত। বাইরে ঘন ঘন বিজলি চমকাচ্ছে। আমি বইপত্র মেলে বসে আছি। থার্মোডিনামিক্সের একটি জটিল অংশ যে করেই হোক পড়ে শেষ করতে হবে।
হঠাৎ কী যেন হয়ে গেল। কেমিস্ট্রির বইখাতা ঠেলে সরিয়ে দিলাম, লিখতে শুরু করলাম—
“রাবেয়া ঘুরে ঘুরে সেই কথা কটিই বারবার বলছিল।
রুনুর মাথা নিচু হতে হতে থুতনি বুকের সঙ্গে লেগে গিয়েছিল।…”
আমার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস—নন্দিত নরকে। ঐ রাতে কেন হঠাৎ উপন্যাস লেখায় হাত দিলাম, কেনই বা এরকম গল্প মাথায় এল তা বলতে পারব না।
১৩ নভেম্বর মধ্যরাতে আমার জন্ম। সন ১৯৪৮ হ্যাঁ, মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে। লেখালেখি করে ত্রিশ বছর পার করলাম। আমি আনন্দিত, ক্লান্তি এখনো আমাকে স্পর্শ করেনি।
ধানমণ্ডির ১৮শ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে কাটছে আমার দিবস রজনী।
আমি কোথাও যাই না বলেই মাঝে মাঝে আমার ফ্ল্যাটে জম্পেশ আড্ডা হয়। যে রাতে আড্ডা থাকে না, আমি শাওনকে নিয়ে ছবি দেখি।
জোছনা আমার অতি প্রিয় বিষয়। প্রতি পূর্ণিমাতেই নুহাশ পল্লীতে যাই জোছনা দেখতে, সঙ্গে পুত্র নিষাদ, নিনিত এবং তাদের মমতাময়ী মা। প্রবল জোছনা আমার মধ্যে এক ধরনের হাহাকার তৈরি করে। সেই হাহাকারের উৎস অনুসন্ধান করেই জীবন পার করে দিলাম।
"কিছু কিছু পুরুষ আছে যারা রূপবতী তরুণীদের অগ্রাহ্য করে একধরনের আনন্দ পায়। সচরাচর এরা নিঃসঙ্গ ধরনের পুরুষ হয়, এবং নারীসঙ্গের জন্যে তীব্র বাসনা বুকে পুষে রাখে"
-অনীশ; হুমায়ূন আহমেদ
"বাংলাদেশের মেয়ের সৌন্দর্য বিচারে গায়ের রঙের ভূমিকাই প্রধান। গায়ের রঙ ধবধবে শাদা হলে ট্যারা চোখের মেয়ে, ভালো করে তাকালে যার নাকের নিচে সূক্ষ্ম গোঁফ দেখা যায় তাকেও রূপবতী হিসাবে গণ্য করা হয়।"
-আজ চিত্রার বিয়ে; হুমায়ূন আহমেদ
"বড়লোকদের দুটা ভাগ আছে। এক ভাগ হলো সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া গ্রুপ। ছুটি ছাটায় এরা সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার বাইরে যেতে পারে না। আরেক ভাগ আমেরিকা-লন্ডন গ্রুপ।"
-আজ চিত্রার বিয়ে; হুমায়ূন আহমেদ
"মেয়েরা পুরাপুরি পানির মত। নিজের আকৃতি নেই। যে পাত্রে রাখা হচ্ছে সে পাত্রের আকার ধারণ করছে"
-ছায়াবিথী; হুমায়ূন আহমেদ

অপেক্ষা

"মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপেক্ষা নামের ব্যপারটি খুব প্রয়োজন। অপেক্ষা হচ্ছে মানুষের বেঁচে থাকার টনিক!"
-অপেক্ষা; হুমায়ূন আহমেদ

এইসব দিনরাত্রি

"দরিদ্র পুরুষদের প্রতি মেয়েদের একপ্রকার মায়া জন্মে যায়, আর এই মায়া থেকে জন্মায় ভালোবাসা।"
-এইসব দিনরাত্রি; হুমায়ূন আহমেদ

বৃষ্টিবিলাস

"ছেলেদের চেহারা তেমন একটা পাল্টায় না। মেয়েদেরটা পাল্টাতে থাকে। কুমারী অবস্থায় এক রকম, বিয়ের কথা পাকাপাকির সময় অন্য রকম, বিয়ের পর আরেক রকম, আবার মা হবার সময় এক দফা পাল্টায়। দ্বিতীয় দফা পাল্টায় শাশুড়ি হবার পর।"
-বৃষ্টিবিলাস; হুমায়ূন আহমেদ

আমিই মিসির আলি

"কোনো পুরুষ মানুষের পক্ষে একা একা সারা জীবন কাটানো সম্ভব না। পুরুষদের নানান ধরনের চাহিদা আছে। ভদ্র চাহিদা, অভদ্র চাহিদা। ওদের চাহিদার শেষ নেই।
-মেয়েরা কি তার থেকে মুক্ত?
-মেয়েরাও তার থেকে মুক্ত না। তবে মেয়েরা ব্যক্তিগত চাহিদার কাছে কখনো পরাজিত হয়না। পুরুষরা হয়।"
-আমিই মিসির আলি; হুমায়ূন আহমেদ


আজ চিত্রার বিয়ে

"মেয়েরা দুশ্চিন্তা করতে খুবই পছন্দ করে। দুশ্চিন্তার কোনো বিষয়ই না, এসব নিয়েও তারা দুশ্চিন্তা করে।"
-আজ চিত্রার বিয়ে; হুমায়ূন আহমেদ

দেয়াল

"কিছু বিদ্যা মানুষের ভেতর থাকে। সে নিজেও তা জানে না।"
-দেয়াল; হুমায়ূন আহমেদ

দেয়াল

"যে লাঠি দিয়ে অন্ধ মানুষ পথ চলে, সেই লাঠি দিয়ে মানুষও খুন করা যায়।"
-দেয়াল; হুমায়ূন আহমেদ

দেয়াল

"মানুষ এবং পশু শুধু যে বন্ধু খোঁজে তা না, তার প্রভুও খোঁজে।"
-দেয়াল; হুমায়ূন আহমেদ

দেয়াল

"মানব জাতির স্বভাব হচ্ছে, সে সত্যের চেয়ে মিথ্যায় আশ্রয়ে নিজেকে নিরাপদ মনে করে।"
-দেয়াল; হুমায়ূন আহমেদ

দিঘির জলে কার ছায়া গো

"কোনো মেয়ে যদি সত্যি সত্যি কোনো ছেলের প্রেমে পড়ে, সে তখন এই ছেলের আশেপাশের সব কিছুর প্রেমে পড়ে।"
-দিঘির জলে কার ছায়া গো; হুমায়ূন আহমেদ

মেঘ বলেছে যাব যাব

"অহংকারী মেয়েরা নিজের পছন্দের কথা সব সময়ই লুকিয়ে রাখে।"
-মেঘ বলেছে যাব যাব; হুমায়ূন আহমেদ

মাতাল হাওয়া

মহসিন হলের ৫৬৪ নম্বর রুমে রসায়ন বিভাগের অতি নিরীহ এক ছাত্র বাস করত। SSC, HSC -তে তার রেজাল্ট ভাল থাকায় তাকে একটি সিঙ্গেল রুম দেয়া হয়। এই বেচারা সবসময় এনএসএফের গুণ্ডাদের ভয়ে তটস্থ থাকত। একদিন কোন কারণ ছাড়াই এনএসএফের নেতারা তার ঘরে ঢুকে রুম তছনছ করে দিল। তার তোষক জ্বালিয়ে দিল এবং Morrison & Boyed এর লেখা বেচারার Organic Chemestry'র বিশাল বইটাও ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলল। বইটা সে অনেক দাম দিয়ে স্কলারশিপের টাকায় কিনেছিল। তার একটাই বই। বাকি বইগুলো সে লাইব্রেরি থেকে এনে পড়ত। নতুন করে তোষক কেনার টাকা তার ছিল না, সে খাটে কাগজ বিছিয়ে থাকতে শুরু করল।

গোবেচারা সেই ছাত্রটির নাম হুমায়ূন আহমেদ। পরবর্তীতে ব্যাচের সবচে' ভাল রেজাল্ট করায় নিয়মানু্যায়ী রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
-মাতাল হাওয়া; হুমায়ূন আহমেদ

তিথির নীল তোয়ালে

"বনের পাখি উড়ে যায় কিন্তু মায়া পড়ে থাকে। মায়ার কষ্ট ভয়ঙ্কর কষ্ট।"
-তিথির নীল তোয়ালে; হুমায়ূন আহমেদ

আজ আমি কোথাও যাব না

"খারাপ সংবাদের নিয়ম হলো, একটা খারাপ সংবাদের পর পর দ্বিতীয় খারাপ সংবাদটা আসে। খারাপ সংবাদ কখনও একা আসে না।"
-আজ আমি কোথাও যাব না; হুমায়ূন আহমেদ

আজ আমি কোথাও যাব না

"একজন মানুষের জন্য অন্য একজন মানুষের অস্থিরতা দেখতে এত ভালো লাগে। এই অস্থিরতার নামই কি ভালোবাসা? 'আমি তোমাকে ভালোবাসি' এই বাক্যটার মানে কি? আমি তোমার জন্য অস্থির হয়ে থাকি? কে জানে ভালোবাসার মানে কী?"
-আজ আমি কোথাও যাব না; হুমায়ূন আহমেদ

তেঁতুল বনে জোছনা

"তীব্র উচ্ছাস কিশোরীদের এলাকা। কিশোরীদের এলাকায় কিশোরিদেরই মানায় অন্য কাউকে মানায় না। হাতের তালুতে তেঁতুলের আচার নিয়ে যখন কোনো কিশোরী চেটে চেটে খাবে তাকে মানাবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে মানাবে না।"
-তেঁতুল বনে জোছনা; হুমায়ূন আহমেদ

ময়ূরাক্ষী

"ময়ূরাক্ষী নদীকে আমি একবারই স্বপ্নে দেখি। নদীটা আমার মনের ভিতর পুরোপুরি গাঁথা হয়ে যায়। এরপর অবাক হয়ে লক্ষ্য করি কোথাও বসে একটু চেষ্টা করলেই নদীটা আমি দেখতে পাই। তার জন্য আমাকে কোন কষ্ট করতে হয় না। চোখ বন্ধ করতে হয় না, কিছু না। একবার নদীটা বের করে আনতে পারলে সময় কাটানো কোন সমস্যা নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমি নদীর তীরে হাঁটি। নদীর হিম শীতল জলে পা ডুবিয়ে বসি। শরীর জুড়িয়ে যায়। ঘুঘুর ডাকে চোখ ভিজে উঠে।"
-ময়ূরাক্ষী; হুমায়ূন আহমেদ

আমার ছেলেবেলা

"আজ থেকে তিরিশ বছর আগে সিলেটের মীরাবাজারের বাসায় এক গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল, দেখি মশারির ভেতর ঠিক আমার চোখের সামনে আলোর একটা ফুল ফুটে আছে। বিস্ময়, ভয় ও আনন্দে আমি চেঁচিয়ে উঠলাম- এটা কি, এটা কি?

বাবা জেগে উঠলেন, মা জাগলেন, ভাইবোনেরা জাগল। বাবা আমার গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, জোছনার আলো ঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে মশারির গায়ে পড়েছে। ভেন্টিলেটরটা ফুলের মত নকশা কাটা। কাজেই তোমার কাছে মনে হচ্ছে মশারির ভেতর আলোর ফুল। ভয়ের কিছু নেই, হাত বাড়িয়ে ফুলটা ধর।

আমি হাত বাড়াতেই সেই আলোর ফুল আমার হাতে উঠে এল কিন্তু ধরা পড়ল না। বাকি রাতটা আমার নির্ঘুম কাটল। কতবার সেই ফুল ধরতে চেষ্টা করলাম- পারলাম না।

সৌন্দর্যকে ধরতে না পারার বেদনায় কাটল আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবন।
আমি জানি সম্ভব না, তবু এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি যদি একবার জোছনার ফুল ধরতে পারি- মাত্র একবার। এই পৃথিবীর কাছে আমার এর চেয়ে বেশী কিছু চাইবার নাই।"
-আমার ছেলেবেলা; হুমায়ূন আহমেদ

হিমু

"গাধা এক ধরনের আদরের ডাক। অপরিচিত বা অর্ধ-পরিচিতদের গাধা বলা যাবে না। বললে মেরে তক্তা বানিয়ে দেবে। প্রিয় বন্ধুদেরই গাধা বলা যায়। এতে প্রিয় বন্ধুরা রাগ করে না বরং খুশি হয়।"
-হিমু; হুমায়ূন আহমেদ


মেঘ বলেছে যাব যাব

"নববিবাহিতা তরুণীরা বাবার বাড়িতে অযথা সময় নষ্ট করে না। এরা দ্রুত অতীত ভুলতে চেষ্টা করে। মেয়েরা তাদের শরীরে সন্তান ধারণ করে। সন্তান ধারণ করে বলেই হয়তো বা প্রকৃতি তাদের ভবিষ্যত্‍মুখী করে রাখে। অতীত তাদের কাছে পুরোনো গল্পের বইয়ের মতো। যে গল্প একবার পাঠ করা হয়েছে বলে কৌতুহল মরে গেছে। দ্বিতীয়বার পড়তে ইচ্ছে করে না। বইটি হারিয়ে গেলেও ক্ষতি নেই!"
-মেঘ বলেছে যাব যাব; হুমায়ূন আহমেদ

বলপয়েন্ট

"পৃথিবীর কিছু ব্যাধি আছে, যার ওষুধ নেই। যেমন—ক্যানসার, পাঠব্যাধি। পাঠব্যাধিতে আক্রান্তজনকে কিছু না কিছু পড়তেই হবে। পড়ার কিছু না থাকলে মনে হবে, মরে যাই।"
-বলপয়েন্ট; হুমায়ূন আহমেদ

নি

"মৃত্যু ভয় বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ। শুধু মাত্র নির্বোধদেরই মৃত্যু ভয় থাকে না।"
-নি; হুমায়ূন আহমেদ

লীলাবতী

"পৃথিবীতে ২ ধরনের মানুষ আছে। এক ধরনের মানুষ রাগ প্রকাশ করতে পারে, খুশি প্রকাশ করতে পারে না। আরেক ধরনের মানুষ খুশি প্রকাশ করতে পারে, রাগ প্রকাশ করতে পারে না।"
-লীলাবতী; হুমায়ূন আহমেদ

আকাশ জোড়া মেঘ

"অসম্ভব ক্ষমতাবান লোকেরা প্রায় সময়ই নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যায়।"
-আকাশ জোড়া মেঘ; হুমায়ূন আহমেদ

তন্দ্রাবিলাস

"মানুষের অনেক অদ্ভুত ক্ষমতার একটি হচ্ছে মিথ্যা বলার ক্ষমতা। কল্পনাশক্তি আছে বলেই সে মিথ্যা বলতে পারে। যে মানুষ মিথ্যা বলতে পারে না, সে সৃষ্টিশীল মানুষ না, রোবট টাইপ মানুষ।"
-তন্দ্রাবিলাস; হুমায়ূন আহমেদ

মেঘ বলেছে যাব যাব

"আমরা জানি একদিন আমরা মরে যাব -এই জন্যেই পৃথিবীটাকে এত সুন্দর লাগে। যদি জানতাম আমাদের মৃত্যু নেই, তাহলে পৃথিবীটা কখনোই এত সুন্দর লাগতো না।"
-মেঘ বলেছে যাব যাব; হুমায়ূন আহমেদ

নবনী

"যে মানুষ মারা যাচ্ছে তার উপর কোন রাগ, কোন ঘেন্না থাকা উচিত নয়।"
-নবনী; হুমায়ূন আহমেদ

আমার আপন আঁধার

"অন্য ভুবনের দিকে যাত্রার আগে আগে সবাই প্রিয়জনদের দেখতে চায়।"
-আমার আপন আঁধার; হুমায়ূন আহমেদ

কোথাও কেউ নেই

"দুঃখ কষ্ট সংসারে থাকেই। দুঃখ কষ্ট নিয়েই বাঁচতে হয়। জন্ম নিলেই মৃত্যু লেখা হয়ে যায়।"
-কোথাও কেউ নেই; হুমায়ূন আহমেদ

নি

"মৃত্যুতে খুব বেশি দুঃখিত হবার কিছু নেই। প্রতিটি জীবিত প্রানীকেই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মরতে হবে। তবে এ মৃত্যু মানে পুরোপুরি ধ্বংস নয়। মানুষের শরীরে অযুত, কোটি, নিযুত ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলস যেমন- ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন- এদের কোন বিনাশ নেই। এরা থেকেই যাবে। ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। কাজেই মানুষের মৃত্যুতে খুব বেশি কষ্ট পাবার কিছু নেই।"
-নি; হুমায়ূন আহমেদ

কবি

"মৃত্যু হচ্ছে একটা শাশ্বত ব্যাপার। একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আমরা যে বেঁচে আছি এটাই একটা মিরাকল।"
-কবি; হুমায়ূন আহমেদ
"প্রকৃতি অসুন্দর সহ্য করে না। তবুও অসুন্দর তৈরি করে, লালন করে। কিন্তু কেন?"
-আমি এবং আমরা; হুমায়ূন আহমেদ

একা একা

"মানুষ হচ্ছে একমাত্র প্রানী, যে জানে একদিন তাকে মরতে হবে। কেননা অন্য কোন প্রানী মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয় না, মানুষ নেয়।"
-একা একা; হুমায়ূন আহমেদ

তোমাকে

"মৃত্যু টের পাওয়া যায়। তার পদশব্দ ক্ষীন কিন্তু অত্যন্ত তীক্ষ্ণ।"
-তোমাকে; হুমায়ূন আহমেদ

রুপা

"ভালোবাসাবাসির ব্যপারটা হাত তালির মত। দু'টা হাত লাগে। এক হাতে তালি বাজেনা। অর্থাৎ একজনের ভালোবাসায় হয় না।"
-রুপা; হুমায়ূন আহমেদ

হরতন ইশকাপন

"সব মানুষই অন্য মানুষকে নিজের দিকে টানতে চান। এক চোর অন্য মানুষকে চোর বানাতে চেষ্টা করে। আর সাধু চেষ্টা করে সাধু বানাতে।"
-হরতন ইশকাপন; হুমায়ূন আহমেদ

ছায়াসঙ্গী

"কিছু কিছু সময় আসে যখন আমরা বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের সীমারেখায় বাস করি। তখন একই সঙ্গে আমরা দেখতে পাই এবং দেখতে পাইনা। বুঝতে পারি এবং বুঝতে পারিনা। অনুভব করি এবং অনুভব করিনা। সে বড় রহস্যময় সময়।"
-ছায়াসঙ্গী; হুমায়ূন আহমেদ


কিছু শৈশব

"যে রহস্যময় জগতে আমরা বাস করি তার অনেক কিছুই আমরা জানি, আবার অনেক কিছুই জানি না। না জানার পাল্লাটাই মনে হয় ভারী।"
-কিছু শৈশব; হুমায়ূন আহমেদ

কোথাও কেউ নেই

"মানুষের জন্মই হইল অপাত্রে ভালোবাসা দান করার জন্য। যাদের কে ভালোবাসার কোন যোগ্যতা নাই তাদেরকেই মানুষ ভালোবাসে।"
-কোথাও কেউ নেই; হুমায়ূন আহমেদ

কালো জাদুকর

"মানব জীবন অল্প দিনের। এই অল্প দিনেই যা দেখার দেখে নিতে হবে। মৃত্যুর পর দেখার কিছু নেই। দোযখে যে যাবে- সে আর দেখবে কি- তার জীবন যাবে আগুন দেখতে দেখতে। আর বেহেশতেও দেখার কিছু নাই। বেহেশতের সবই সুন্দর। যার সব সুন্দর তার সৌন্দর্য বোঝা যায় না। সুন্দর দেখতে হয় অসুন্দরের সঙ্গে।"
-কালো যাদুকর; হুমায়ূন আহমেদ

আমার ছেলেবেলা

"ভয়ংকরেরও এক ধরনের সৌন্দর্য আছে। সেই সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো যায় না।"
-আমার ছেলেবেলা; হুমায়ূন আহমেদ

আমিই মিসির আলি

"আসল রহস্য পদার্থ বিদ্যা বা অংকে না, আসল রহস্য মানুষের মনে। আকাশ যেমন অন্তহীন, মানুষের মনও তাই। পৃথিবীর বেশির ভাগ অংকবিদ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোবাসতেন। আকাশের দিকে তাকালে জাগতিক সব কিছুই তুচ্ছ মনে হয়। We are so insignificant.আমাদের জন্ম মৃত্যু সবই অর্থহীন।"
-আমিই মিসির আলি; হুমায়ূন আহমেদ

অপেক্ষা

"মৃত মানুষদের জন্য আমরা অপেক্ষা করি না। আমাদের সমস্ত অপেক্ষা জীবিতদের জন্য।"
-অপেক্ষা; হুমায়ূন আহমেদ

তন্দ্রাবিলাস

"কুৎসিত জিনিস দেখতে হয় কাছ থেকে, সুন্দর জিনিস দূর থেকে।"
-তন্দ্রাবিলাস; হুমায়ূন আহমেদ

জল জোছনা

"সামান্য কথাবার্তা থেকেও অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে। একত্র হওয়া একদল মানুষের মতো ভয়ংকর আর কিছুই নেই। এরা বারুদ। আগুনের একটা ফুলকি পড়লেই আর দেখতে হবে না। আগুনের ফুলকি থাকে সামান্য কথাবার্তায়।"
-জল জোছনা; হুমায়ূন আহমেদ

বলপয়েন্ট

"পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে। ভালোবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ংকর অত্যাচার। কারণ, এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনোই কিছু বলা যায় না। সহ্য করে নিতে হয়।"
-বলপয়েন্ট; হুমায়ূন আহমেদ

লীলাবতী

"আনন্দ পেলে মানুষ তার আনন্দের খবর সবাইকে জানাতে চেষ্টা করে। মানুষ দুঃখ কিংবা কষ্ট পেলে তার খবর কিন্তু জানাতে চায় না। গোপন করে রাখে। মানুষ ছাড়া অন্য সব পশু-প্রাণিজগতের নিয়ম কিন্তু ভিন্ন। পশু বা পক্ষীজগতের নিয়ম হলো, দুঃখ-কষ্ট চিৎকার-চেঁচামেচি করে সবাইকে জানাও। আনন্দের খবর গোপন রাখো।"
-লীলাবতী; হুমায়ূন আহমেদ

বলপয়েন্ট

"লেখালেখি এক ধরনের থেরাপি। ব্যক্তিগত হতাশা, দুঃখবোধ থেকে বের হয়ে আসার পথ। আমি এই থেরাপি গ্রহণ করে নিজের মনকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করি।"
-বলপয়েন্ট; হুমায়ূন আহমেদ

হিমুর রুপালী রাত্রি

"যে বাড়িতে মানুষ মারা যায় সে বাড়িতে মৃত্যুর আট থেকে নয় ঘন্টা পর একটা শান্তি শন্তি ভাব চলে আসে। আত্মীয় স্বজনরা কান্নাকাটি করে চোখের পানির স্টক ফুরিয়ে ফেলে। চেষ্টা করেও তখন কান্না আসে না। তবে বাড়ির সবার মধ্যে দুঃখী দুঃখী ভাব থাকে। সবাই সচেতন ভাবেই হোক বা অচেতন ভাবেই হোক দেখানোর চেষ্টা করে মৃত্যুতে সেই সব চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে। মূল দুঃখের চেয়ে অভিনয়ের দুঃখই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। একমাত্র ব্যতিক্রম সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের দুঃখ।"
-হিমুর রুপালী রাত্রি; হুমায়ূন আহমেদ

দেবী

"মৃত্যুর সময় পাশে কেউ থাকবে না, এর চেয়ে ভয়াবহ বোধ হয় আর কিছুই নেই। শেষ বিদা্য় নেয়ার সময় অন্তত কোনো একজন মানুষকে বলে যাওয়া দরকার। নিঃসঙ্গ ঘর থেকে একা একা চলে যাওয়া যায় না, যাওয়া উচিত নয়। এটা হৃদয়হীন ব্যাপার।"
-দেবী; হুমায়ূন আহমেদ

দেবী

"মানুষের সব শখ মেটা উচিত নয়। একটা কোনো ডিসস্যাটিসফেকশন থাকা দরকার। তাহলে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। সব শখ মিটে গেলে বেঁচে থাকার প্রেরনা নষ্ট হয়ে যায়। যে সব মানুষের শখ মিটে গেছে, তারা খুব অসুখী মানুষ।"
-দেবী; Humayun Ahmed

আঙুল কাটা জগলু

"একসময় স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতা আলাদা কিনতে পাওয়া যেত। ফিতা ছিঁড়ে গেলে নতুন ফিতা কিনে লাগান হতো। এখন এই কাজ কেউ করে না। ফিতা ছিঁড়ে গেলে স্যান্ডেল ফেলে দিয়ে নতুন স্যান্ডেল কেনে। ওয়ানটাইম ইউজ। আমরা দ্রুত ওয়ানটাইমের দিকে এগুচ্ছি। এই অভ্যাস কি আমরা প্রকৃতির কাছে পেয়েছি? প্রকৃতিও এরকমই করে। একটা মেঘ একবার ব্যাবহার করে ফেলে দেয়। আবার নতুন মেঘ তৈরি করে।"
-আঙুল কাটা জগলু, হুমায়ূন আহমেদ

জোছনা ও জননীর গল্প

"মেয়েরা হচ্ছে জন্মদাত্রী জননী। হাজার ভুল করলেও এদের উপর রাগ করতে নেই। এদের উপর রাগ করাটাই কাপুরুষতা।"
-জোছনা ও জননীর গল্প; হুমায়ূন আহমেদ

হিমুর মধ্যদুপুর

"সবচে সহজ পণ্য হল মানুষ। মানুষ কেনা কোনো সমস্যাই না। মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে সহজে কেনা যায় বুদ্ধিজীবীদের। তাঁরা খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন কখন বিক্রি হবেন।"
-হিমুর মধ্যদুপুর; হুমায়ূন আহমেদ


এই আমি

মানুষের হাসি খুব অদ্ভূত জিনিস জন্তু জানোয়ার হাসতে পারে না মানুষ হাসে।
একজন "হাসন্ত" মানুষের উপর এজন্য রাগ থাকে না।
-এই আমি; হুমায়ূন আহমেদ

এপিটাফ

"বেশির ভাগ মানুষের স্বভাব হচ্ছে বিড়ালের মত। তারা সুখের সময় পাশে থাকে। দুঃখকষ্ট যখন আসে তখন দুঃখ কষ্টের ভাগ নিতে হবে এই ভয়ে চুপি চুপি সরে পড়ে।
তাদের কোন দোষ নেই। আল্লাহ মানুষকে এমন করেই তৈরি করেছেন।
তারপরেও কিছু কিছু মানুষ আছে যারা দুঃখ-কষ্টের সময় পাশে এসে দাঁড়ায়। দুঃখ-কষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত বড় কোন অস্ত্র তাদের হাতে থাকে না। তাদের থাকে শুধু হৃদয় পূর্ণ ভালবাসা।"
-এপিটাফ; হুমায়ূন আহমেদ

মিসির আলির চশমা

'বাবা' সম্বোধনে লেখা চিঠি অগ্রাহ্য করা কোন পুরুষের পক্ষেই সম্ভব না। মেয়েদের পক্ষে ‘মা’ সম্বোধনের চিঠি অগ্রাহ্য করা খুবই সম্ভব। তারা ‘মা’ ডাক শুনে অভ্যস্ত। পুরুষরা বাবা শুনে অভ্যস্ত না। কেউ বাবা ডাকলেই সেই ডাক পুরুষদের মাথার ভেতর ডুকে যায়।
-মিসির আলির চশমা; হুমায়ূন আহমেদ

পেন্সিলে আঁকা পরী

"পৃথিবীর সবচেয়ে অসুন্দর দৃশ্য হল লোভে চকচক করা চোখ। আর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য গভীর মমতায় আদ্র প্রেমিকার চোখ।"
-পেন্সিলে আঁকা পরী; হুমায়ূন আহমেদ

অপেক্ষা

"মানুষের মাঝে মাঝে কচ্ছপের মত অবস্থা হয়। মানুষ উল্টে যায়। ঠিক হবার জন্য ছটফট করতে থাকে, ঠিক হতে পারে না। বাইরের সাহায্য ছাড়া ঠিক হওয়া তখন সম্ভব না।"
-অপেক্ষা; হুমায়ূন আহমেদ

মেঘ বলেছে যাব যাব

"সঙ্গপ্রিয় মানুষের জন্য নিঃসঙ্গতার শাস্তি- কঠিন শাস্তি। এই শাস্তি মানুষকে বদলে দেয়।"
-মেঘ বলেছে যাব যাব, হুমায়ূন আহমেদ

রঙপেন্সিল

"আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, মৃত্যুর পরপর মানুষের ওজন বেড়ে যায়। আমি মনে করি এ ধারণা মানসিক। মৃত ব্যক্তির প্রতি এক ধরনের ভীতি আমাদের মধ্যে কাজ করে। এই ভীতির কারণে মৃত ব্যক্তির ওজন বেশি মনে হয়। মিসির আলি সাহেবও হয়তো আমার সাথে একমত হবেন।"
-রঙপেন্সিল; হুমায়ূন আহমেদ

রূপা

"যে অল্পতে তুষ্ট থাকে তার কাছে এ পৃথিবীর সব কষ্ট সহজ হয়ে যায়।"
-রূপা, হুমায়ূন আহমেদ

আঙ্গুল কাটা জগলু

“মানুষের স্বভাব হলো, কেউ যখন ভালোবাসে তখন নানান কর্মকাণ্ড করে সেই ভালোবাসা বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে, আবার কেউ যখন রেগে যায় তখন তার রাগটাও বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছা করে।”
Humayun Ahmed, আঙ্গুল কাটা জগলু

ময়ূরাক্ষী

"হাসিতে খুব সহজেই মানুষকে চেনা যায়। সব মানুষ একই ভঙ্গিতে কাঁদে, কিন্তু হাসার সময় একেক জন একেক রকম করে হাসে।"
-হুমায়ূন আহমেদ, ময়ূরাক্ষী


একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা

“বিবাহ এবং মৃত্যু এই দুই বিশেষ দিনে লতা-পাতা আত্মীয়দের দেখা যায়। সামাজিক মেলামেশা হয়। আন্তরিক আলাপ আলোচনা হয়।”
Humayun Ahmed, একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম

“আমার সঙ্গে কি আছে জানিস? পদ্ম। নীলপদ্ম। পাঁচটা নীলপদ্ম নিয়ে ঘুরছি। কি অপূর্ব পদ্ম। কাউকে দিতে পারছিনা। দেয়া সম্বব নয়। হিমুরা কাউকে নীলপদ্ম দিতে পারে না।”
Humayun Ahmed, হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম

“সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হলো, আসাদুল্লাহ সাহেবের নীলপদ্ম থিউরি ঠিক আছে। এই তরুণী তার সমস্ত নীলপদ্ম হিমু নামের এক ছেলের হাতে তুলে দিয়ে তীব্র কষ্ট ও যন্ত্রণার ভেতর বাস করছে। এই যন্ত্রণা, এই কষ্ট থেকে তার মুক্তি নেই।”
Humayun Ahmed, হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম

দেয়াল

“চট করে কারো প্রেমে পড়ে যাওয়া কাজের কথা না। অতি রূপবতীদের কারও প্রেমে পড়তে নেই। অন্যেরা তাদের প্রেমে পড়বে, তা-ই নিয়ম।”
Humayun Ahmed, দেয়াল

সে আসে ধীরে

“মেয়েদের অনেক গুণের মধ্যে বড় গুণ হলো এরা খুব সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারে। কথাবার্তায় নিতান্ত এলোমেলো মেয়েও চিঠি লেখায় গোছানো। মেয়েদের চিঠিতে আরেকটা ব্যাপার থাকে - বিষাদময়তা। নিতান্ত আনন্দের সংবাদ দিয়ে লেখা চিঠির মধ্যেও তারা জানি কী করে সামান্য হলেও দুঃখ মিশিয়ে দেয়। কাজটা যে তারা ইচ্ছা করে করে তা না। প্রকৃতি তাদের চরিত্রে যে বিষাদময়তা দিয়ে রেখেছে তাই হয়তো চিঠিতে উঠে আসে।”
Humayun Ahmed, সে আসে ধীরে

এই মেঘ, রৌদ্র-ছায়া

“দিনকাল পাল্টে গেছে, এখন আর মানুষ আগের মতো নাই। মওলানা ধরনের মানুষের দিকে এখন আর আগের মতো ভয়-মিশ্রিত শ্রদ্ধার চোখে কেউ তাকায় না। মওলানাও যে বিবেচনায় রাখার মতো একজন, কেউ তাও বোধহয় মনে করে না। ছল্টুফল্টু ভাবে।”
Humayun Ahmed, এই মেঘ, রৌদ্র-ছায়া

এই মেঘ, রৌদ্র-ছায়া

“বিপদ যখন আসে একটার পর একটা আসে। বিপদরা পাঁচ ভাইবোন। এদের মধ্যে খুব মিল। এই ভাইবোনরা কখনো একা কারো কাছে যায় না। প্রথম একজন যায়, তারপর তার অন্য ভাইবোনরা উপস্থিত হয়।”
Humayun Ahmed, এই মেঘ, রৌদ্র-ছায়া

কোথাও কেউ নেই

“ভালবাসার মানুষের সাথে বিয়ে না হওয়াটাই বোধ হয় ভাল। বিয়ে হলে মানুষটা থাকে ভালবাসা থাকে না। আর যদি বিয়ে না হয় তাহলে হয়ত বা ভালবাসাটা থাকে, শুধু মানুষটাই থাকে না। মানুষ এবং ভালবাসা এই দুয়ের মধ্যে ভালবাসাই হয়ত বেশি প্রিয়।”
-কোথাও কেউ নেই, হুমায়ূন আহমেদ

দরজার ওপাশে

“শিকল দিয়ে কাউকেই বেঁধে রাখা হয় না। তারপরেও সব মানুষই কোনও না কোনও সময় অনুভব করে তার হাত-পায়ে কঠিন শিকল। শিকল ভাঙতে গিয়ে সংসার বিরাগী গভীর রাতে গৃহত্যাগ করে। ভাবে, মুক্তি পাওয়া গেল। দশতলা বাড়ির ছাদ থেকে গৃহী মানুষ লাফিয়ে পরে ফুটপাতে। এরা ক্ষণিকের জন্য শিকল ভাঙার তৃপ্তি পায়।”
-দরজার ওপাশে, হুমায়ূন আহমেদ

হিমু

"রূপবতী নারীদের অনুরোধ প্রত্যাখান করতে নেই।
প্রত্যাখান করলে অভিশাপ লাগে। রূপের অভিশাপ। রূপ তখন ধরা দেয় না।
রূপের অভিশাপে পড়া ভয়াবহ ব্যাপার।"
-হিমু; হুমায়ূন আহমেদ

সে আসে ধীরে

"পুরুষের হচ্ছে ভালোবাসা ভালোবাসা খেলা। মেয়েদের ব্যাপার অন্যরকম, তাদের কাছে ভালোবাসার সঙ্গে খেলার কোন সম্পর্ক নেই। একটা মেয়ে যখন ভালোবাসে তখন তার ভালোবাসার সাথে অনেক স্বপ্ন যুক্ত হয়ে যায়। সংসারের স্বপ্ন, সংসারের সঙ্গে শিশুর স্বপ্ন। একটা পুরুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন সে শুধু তার প্রেমিকাকেই দেখে আর কাউকে নয়।"
-সে আসে ধীরে; হুমায়ূন আহমেদ


শঙ্খনীল কারাগার

"কোন কোন রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো।
আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের উথাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোন যোগ নেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ। আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জাম গাছের পাতার সর সর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা হা করে উঠে।
আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কি বিপুল বিষণ্ণতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি...'

রঙপেন্সিল


"ধরা যাক, এক কঠিন নাস্তিক মঙ্গল গ্রহে গিয়েছেন। সেখানকার প্রাণহীন প্রস্তর সংকুল ভূমি দেখে তিনি বলতে পারেন- এ কেউ সৃষ্টি করেন নি। অনাদিকাল থেকে এটা ছিল। তার এই বক্তব্যে কেউ তেমন বাঁধা দিবে না। কিন্তু তিনি যদি মঙ্গল গ্রহে হাঁটতে হাঁটতে একটা ডিজিটাল নাইকন ক্যামেরা পেয়ে যান তা হলে তাকে তখন বলতেই হবে, এই ক্যামেরা আপনা আপনি হয় নি। এর একজন নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা আছে।
মনে করা যাক, ক্যামেরা হাতে তিনি আরো কিছু দূর গেলেন। এমন সময় তার সামনে দিয়ে একটা খরগোশ দৌড় দিল। যে খরগোশের চোখ নাইকন ক্যামেরার চেয়েও হাজার গুণ জটিল বা ভাল।
তখন কি তিনি স্বীকার করবেন যে, এই খরগোশের কেউ একজন সৃষ্টিকর্তা আছে?"

-
হুমায়ূন আহমেদ, রঙপেন্সিল

এই মেঘ, রৌদ্র-ছায়া

“মিথ্যা হলো শয়তানের বিয়ের মন্ত্র। মিথ্যা বললেই শয়তানের বিয়ে হয়। বিয়ে হওয়া মানেই সন্তান-সন্ততি হওয়া। একটা মিথ্যার পর আরো অনেকগুলি মিথ্যা বলতে হয় এই কারণেই। পরের মিথ্যাগুলি শয়তানের সন্তান।”
Humayun Ahmed, এই মেঘ, রৌদ্র-ছায়া