মেঘের ছায়া

শুভ্র তার চশমা খঁজে পাচ্ছে না। বিছানার পাশে রেখে সে বাথরুমে ঢূকেছিল চোখে পানি দিতে। বাথরুম থেকে বের হয়ে সে গেল বারান্দায়। বারান্দায়-এ মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত দ’বার হাঁটল। ঠিক সন্ধ্যায় চশমা ছাড়া পৃথিবীকে দেখতে ভাল লাগে। চারদিকে অন্ধকার। এই অন্ধকারে বাতি জ্বলে উঠেছে। চশমা ছাড়া এই বাতিগুলিকে অনেক উজ্জল মনে হয়।

শুভ্রর ইচ্ছে করছিল আরো খানিক্ষণ হাঁটতে, কিন্তু সময় নেই। আজ জাহেদের বিয়ে। সন্ধ্যা মেলাবার পর বরযাত্রী রওনা হবে। শুভ্র বরযাত্রীদের একজন। সে মাইক্রোবাস নিয়ে যাবে। তার দেরী করার সময় নেই। শুভ্র ঘরে ঢুকল। চশমা খুঁজে পেল না। বিছানার পাশে এই সপ্তাহের টাইম পত্রিকার পাতা খোলা অবস্থায় আছে। পত্রিকার পাশে একপাশে এক প্যাকেট ক্যাসো নোট। প্যাকেট খোলা হয়নি। বালিশের নিচে তার নোটবুক এবং পেন্সিল। সবই আছে, চশমা নেই। শুভ্র তার শরীরে একধরনের কাঁপুনি অনুভব করল। চশমা হারালে তার এমন হয়। মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। নিজেকে এত অসহায় লাগে! মনে হয় অচেনা অজানা দেশের হাজার হাজার মানুষের মাঝখানে সে হারিয়ে গেছে। চোখে দেখতে পারছে না, কথা বলতে পারছে না। শুধু বুঝতে পারে অসংখ্য মানুষ পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। সে যেমন ওদের দেখতে পাচ্ছে না, ওরাও তাকে দেখতে পারছে না। সে ওদের কাছে অদৃশ্য মানব।

-মেঘের ছায়া, হুমায়ূন আহমেদ

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন তৈরি করেছেন শূন্য পেজ অ্যাডমিন হুমায়ূন আহমেদ

Post a Comment