গাড়িতে উঠেই নিতু বলল, 'ঐ দিন আপনার মুখের ভঙ্গি দেখে খুব মজা পেয়েছি, আতাহার ভাই।'
-কোন দিন?
-ঐ যে, যেদিন আপনি জিজ্ঞেস করলেন, তুই কি আমার প্রেমে পড়েছিস? আর আমি বললাম...হু।
-এসব কথাবার্তা ড্রাইভারের সামনে বলাটা কি ঠিক হচ্ছে?
নীতু কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, 'কোন অসুবিধা নেই। শুনুন আতাহার ভাই, ঐ দিন প্রথম আমি টের পেলাম যে, আমি আসলে খুব বড় মাপের অভিনেত্রী।
-প্রতিটি মেয়েই বড় মাপের অভিনেত্রী।
- আমার অভিনয় ক্ষমতা তাদের চেয়েও ভাল। কারণ ঐ দিন আপনার সঙ্গে আমি চমৎকার অভিনয় করলাম। চোখে পানি পর্যন্ত নিয়ে এলাম। আপনি বুঝতেও পারলেন না। ভাবলেন সত্যি। চোখ-মুখ কি রকম হয়ে গেল! হিহিহি!
-অভিনয় ছিল না-কি?
-অভিনয় তো বটেই। আমি শুধু শুধু আপনার প্রেমে পড়তে যাব কেন?
-প্রেমে তো মেয়েরা শুধুই পড়ে।
-আমি পড়ি না। যাই হোক, ঐ দিন আপনার সঙ্গে অভিনয় করাটা ঠিক হয়নি। আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
-আচ্ছা বেশ। ক্ষমা করলাম।
-আপনার কি মন খারাপ লাগছে আতাহার ভাই?
-মন খারাপ লাগবে কেন?
নীতু তার ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল, 'একটা ছেলে যখন শুনে কোন মেয়ে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তখন সেই ছেলে প্রচণ্ড মানসিক তৃপ্তি লাভ করে। মেয়েটা কালো কুৎসিত হলেও কিছু যায় আসে না। মেয়েটা দেখতে কেমন সেটা তখন ছেলেটার মনে থাকে না। তার মনে থাকে শুধু প্রেমের ব্যাপারটা। প্রেমের তো কোন বর্ণ নেই। কালো মেয়ের প্রেম যেমন, রূপবতী মেয়ের প্রেমও একই রকম।
-তুই তো দেখি প্রেমবিশারদ হয়ে গেছিস রে নীতু। বকবকানি বন্ধ কর!
নীতু চুপ হয়ে গেল এবং একটু হকচকিয়ে গেল। আতাহার বলল, 'তোর অভিনয় ভাল হয়েছে। আমি বুঝতেই পারিনি অভিনয়। বাসায় ফিরে সেই রাতে তোকে স্বপ্নও দেখে ফেললাম।'
-কী স্বপ্ন দেখলেন?
-তুই পাগল হয়েছিস? কী স্বপ্ন দেখলাম – আমি তোকে বলব না-কি? পরে তুই এই নিয়ে হাসাহাসি করবি।
-আতাহার ভাই, আমি কোনদিন হাসাহাসি করব না।
-অবশ্যই হাসাহাসি করবি। প্রেমের অভিনয় দেখিয়ে তুই আমার আক্কেল গুড়ুম করে দিয়েছিস। তোর কাছে স্বপ্ন বলে ধরা খাব না-কি? আমাকে এই রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দে।
-রাস্তার মোড়ে নামাব কেন? গনি সাহেবের অফিসের সামনেই নামিয়ে দেই।
-ওখানে গেলে ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়বি। আমাকে নামিয়ে দে।
নীতু ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলল। সে মূর্তির মত বসে আছে। তার ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাঁদে। কেন সে বলল...অভিনয়। এটা বলে তার লাভটা কি হল?
আতাহার নেমে গেছে। নীতু থাকিয়ে আছে। কিছুতেই সে তার চোখ ফিরিয়ে নিতে পারছে না। সেও কি গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়বে? ছুটে গিয়ে আতাহার ভাই কে বলবে, 'আতাহার ভাই, গাড়িতে যা করেছি সেটা অভিনয়। আমি আর কোনদিন আপনার সঙ্গে অভিনয় করব না, কোনদিন না!
✔ কবি; হুমায়ূন আহমেদ
-কোন দিন?
-ঐ যে, যেদিন আপনি জিজ্ঞেস করলেন, তুই কি আমার প্রেমে পড়েছিস? আর আমি বললাম...হু।
-এসব কথাবার্তা ড্রাইভারের সামনে বলাটা কি ঠিক হচ্ছে?
নীতু কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, 'কোন অসুবিধা নেই। শুনুন আতাহার ভাই, ঐ দিন প্রথম আমি টের পেলাম যে, আমি আসলে খুব বড় মাপের অভিনেত্রী।
-প্রতিটি মেয়েই বড় মাপের অভিনেত্রী।
- আমার অভিনয় ক্ষমতা তাদের চেয়েও ভাল। কারণ ঐ দিন আপনার সঙ্গে আমি চমৎকার অভিনয় করলাম। চোখে পানি পর্যন্ত নিয়ে এলাম। আপনি বুঝতেও পারলেন না। ভাবলেন সত্যি। চোখ-মুখ কি রকম হয়ে গেল! হিহিহি!
-অভিনয় ছিল না-কি?
-অভিনয় তো বটেই। আমি শুধু শুধু আপনার প্রেমে পড়তে যাব কেন?
-প্রেমে তো মেয়েরা শুধুই পড়ে।
-আমি পড়ি না। যাই হোক, ঐ দিন আপনার সঙ্গে অভিনয় করাটা ঠিক হয়নি। আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
-আচ্ছা বেশ। ক্ষমা করলাম।
-আপনার কি মন খারাপ লাগছে আতাহার ভাই?
-মন খারাপ লাগবে কেন?
নীতু তার ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল, 'একটা ছেলে যখন শুনে কোন মেয়ে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তখন সেই ছেলে প্রচণ্ড মানসিক তৃপ্তি লাভ করে। মেয়েটা কালো কুৎসিত হলেও কিছু যায় আসে না। মেয়েটা দেখতে কেমন সেটা তখন ছেলেটার মনে থাকে না। তার মনে থাকে শুধু প্রেমের ব্যাপারটা। প্রেমের তো কোন বর্ণ নেই। কালো মেয়ের প্রেম যেমন, রূপবতী মেয়ের প্রেমও একই রকম।
-তুই তো দেখি প্রেমবিশারদ হয়ে গেছিস রে নীতু। বকবকানি বন্ধ কর!
নীতু চুপ হয়ে গেল এবং একটু হকচকিয়ে গেল। আতাহার বলল, 'তোর অভিনয় ভাল হয়েছে। আমি বুঝতেই পারিনি অভিনয়। বাসায় ফিরে সেই রাতে তোকে স্বপ্নও দেখে ফেললাম।'
-কী স্বপ্ন দেখলেন?
-তুই পাগল হয়েছিস? কী স্বপ্ন দেখলাম – আমি তোকে বলব না-কি? পরে তুই এই নিয়ে হাসাহাসি করবি।
-আতাহার ভাই, আমি কোনদিন হাসাহাসি করব না।
-অবশ্যই হাসাহাসি করবি। প্রেমের অভিনয় দেখিয়ে তুই আমার আক্কেল গুড়ুম করে দিয়েছিস। তোর কাছে স্বপ্ন বলে ধরা খাব না-কি? আমাকে এই রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দে।
-রাস্তার মোড়ে নামাব কেন? গনি সাহেবের অফিসের সামনেই নামিয়ে দেই।
-ওখানে গেলে ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়বি। আমাকে নামিয়ে দে।
নীতু ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলল। সে মূর্তির মত বসে আছে। তার ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাঁদে। কেন সে বলল...অভিনয়। এটা বলে তার লাভটা কি হল?
আতাহার নেমে গেছে। নীতু থাকিয়ে আছে। কিছুতেই সে তার চোখ ফিরিয়ে নিতে পারছে না। সেও কি গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়বে? ছুটে গিয়ে আতাহার ভাই কে বলবে, 'আতাহার ভাই, গাড়িতে যা করেছি সেটা অভিনয়। আমি আর কোনদিন আপনার সঙ্গে অভিনয় করব না, কোনদিন না!
✔ কবি; হুমায়ূন আহমেদ
No comments:
Post a Comment