জোছনা ও জননীর গল্প

"কালুরঘাট রেডিওস্টেশন থেকে প্রচারিত মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে পরে নানান বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তিনি মোট ক'বার ঘোষণা পাঠ করেছেন? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে বাংলাদেশের একচ্ছত্র নায়ক এবং তার পক্ষেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করা হচ্ছে। এই বিবৃতি কত তারিখে ক'বার পড়া হলো? এই নিয়ে বিভ্রান্তি। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের আগেই স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের প্রসঙ্গ বই পত্রে পাওয়া যাচ্ছে। যেমন চট্রগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আব্দুল হান্নান দুপুর দু'টাই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বাংলা অনুবাদ প্রচার
করেন। ২৬শে মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে স্বাধীনতা ঘোষণার বাংলা অনুবাদ দ্বিতীয়বার পড়া হয়। পাঠ করেন হাটহাজারী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল জনাব আবুল কাশেম সন্দীপ।

স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে মেজর জিয়া তাঁর ডায়েরীতে যা লিখেছেন তা হলো-

'২৭শে মার্চ শহরের চারেদিকে তখন বিক্ষিপ্ত লড়ায় চলছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টাই রেডিওস্টেশনে এলাম। এক টুকরো কাগজ খুঁজছিলাম। হাতের কাছে একটা এক্সারসাইজ খাতা পাওয়া গেল। তার একটি পৃষ্ঠায় দ্রুত হাতে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম ঘোষণার কথা লিখলাম। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছি-সে কথাও লেখা হলো সেই প্রথম ঘোষণায়... কিছুক্ষণের মধ্যে সেই ঘোষণা বেতারে প্রচার করলাম। ২৮ মার্চ সকাল থেকে পনেরো মিনিট পরপর ঘোষনাটি প্রচার করা হলো কালুরঘাট রেডিওস্টেশন থেকে। ৩০ মার্চ দ্বিতীয় ঘোষণাটি প্রচার করা হলো রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধক্রমে।'


স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে কোনো রকম বিভ্রান্তি থাকতে পারে না। এই একটি বিষয় দল মতের উর্ধে‌ আমাদের উঠতেই হবে। 'সত্যেন ধার্য পৃথ্বী, সত্যেন তাপতে রবি, সত্যেন বাতি বায়ুশ্চ, সর্বং‌ সত্যে প্রতিষ্ঠিতম।' সত্যই পৃথিবীকে ধারণ করেছে, সত্যের দ্বারাই সূর্য তাপ বিকিরন করছে, সত্যের জন্যই বাতাস বইছে, সত্যেই সব কিছু প্রতিষ্ঠিত।" -লেখক
-জোছনা ও জননীর গল্প (প্রথম খন্ড) ফুটনোট থেকে; হুমায়ূন আহমেদ

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন তৈরি করেছেন শূন্য পেজ অ্যাডমিন হুমায়ূন আহমেদ

Post a Comment