হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের উৎসর্গপত্র

আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের বই হাতে পাওয়ার পর প্রথম উৎসর্গপত্রটি পড়ি। অনেক অর্থপূর্ণ, সুখপাঠ্য এবং কৌতূহল উদ্দীপক হয়ে থাকে স্যারের উৎসর্গপত্রটি।
একটি ব্যতীত হুমায়ূন আহমেদের সকল গ্রন্থেই একটি পৃথক উৎসর্গবাণী আছে। সাধারণতঃবইয়ের শিরোনাম পাতার পর অন্য একটি পাতাতে থাকে উৎসর্গ পত্র।
যে গ্রন্থটিতে কোন উৎসর্গপত্র নেই:
* কুহক



যে বই গুলোতে উৎসর্গ পত্র আছে কিন্তু স্যার কাউকে উৎসর্গ করেন নাইঃ
*হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য 
এক জীবনে অনেককে বই উৎসর্গ করে ফেলেছি। এদের মধ্যে পছন্দের মানুষ আছে আবার অপছন্দের মানুষও আছে। অপছন্দের মানুষদের কেন বই উৎসর্গ করেছিলাম এখন তা আর মনে করতে পারছি না। উৎসর্গ খেলাটা আপাতত বন্ধ।
*হরতন ইশকাপন 
এই বইটির কোন উৎসর্গ পত্র নেই। উৎসর্গ পাতায় কারোর নাম লিখতে ইচ্ছা করছে না। যতো বয়স বাড়ছে আমিও মনে হয় মিসির আলির মতো নিজেকে গুটিয়ে আনছি।
আজ হিমুর বিয়ে উৎসর্গ করার মতো কাউকে পাচ্ছি না। সরি।
*মিসির আলি! আপনি কোথায়? 
কিছু লেখা আছে কাউকে উৎসর্গ করতে মন চায় না। এই লেখাটি সেরকম। কাজেই উৎসর্গ পত্রে কেউ নেই।
পরিবারের সদস্যদেরঃ
  1. নন্দিত নরকে“ নন্দিত নরকবাসী মা-বাবা, ভাইবোনদের ”
  2. আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই বাবা ও মা’কে
  3. জোছনা ও জননীর গল্প  আমার মা বেগম আয়েশা আক্তার খাতুনবাবা(শহীদ) ফয়জুর রহমান আহমেদ
  4. কহেন কবি কালিদাস  এক সময় তার পছন্দের চরিত্র ছিলো হিমু। সে হিমুর মতো কথা বলতো, হিমুর মতো ভাবতো। তার বোনরা তার কান্ড দেখে তাকে একটা হলুদ পাঞ্জাবিও বানিয়ে দিলো। সে গম্ভীর মুখে হলুদ পাঞ্জাবি পরে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলো। কিছুদিন হলো সে জানাচ্ছে হিমু এখন আর তার প্রিয় চরিত্র না। সে এখন মিসির আলির ভক্ত।মিসির আলির এই বইটি তার জন্যেনুহাশ হুমায়ূন দ্য গ্রেট
  5. নুহাশ এবং আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ গোলটা-চক্ষু, নুহাশ আব্বুটিং কে
  6. দারুচিনি দ্বীপমা মনি নোভা আহমেদ এই উপন্যাসের পান্ডুলিপির প্রথম পাঠিকা নবম শ্রেণীর বালিকা আমার বড় মেয়ে নোভা আহমেদ। সে বই শেষ করেই আমাকে বললো, আমার যখন একুশ বছর বয়স হবে তখন কি তুমি আমাকে এই বইয়ের নায়িকার মতো একা একা সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড যেতে দেবে? আমি বললাম- না।সে কঠিন গলায় বলল, তাহলে তুমি এই বইয়ে মিথ্যা কথা কেন লিখলে? আমি তার অভিমানী চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে বাধ্য হলাম-আচ্ছা যাও তোমাকেও যেতে দেবো।
  7. রূপার পালঙ্ক একবার একজন লেখক আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। আমাদের তিনকন্যা যেযেখানে ছিলো, লেখকের নাম শুনে উড়ে চলে এলো। আমার মেজো মেয়ে বলল, এতো বড় লেখকের সামনে সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তার না-কি পা ঝিমঝিম করছে। আমি তখন লেখককে দেখছিলাম না, মুগ্ধ হয়ে আমার তিনকন্যার উচ্ছ্বাস দেখছিলাম।সেই লেখকের নাম-শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
  8. আমার প্রিয় ভৌতিক গল্প আমার তিন কন্যা বিপাশা, শীলা, নোভা।এরা ভূত বিশ্বাস করে না, কিন্তু ভূতের ভয়ে অস্থির হয়ে থাকে। প্রায়ই দেখা যায় তিন কন্যা ঠাসাঠাসি করে এক বিছানায় ঘুমুচ্ছে, কারণ কেউ একজন ভয় পেয়েছে।
  9. হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ভালবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন, তবে কেন মিছে ভালোবাসা .......গুলতেকিনকে
  10. মিসির আলি অমনিবাস মিসির আলি অমনিবাস’ আমার অতি প্রিয় গ্রন্থের একটি। প্রিয় গ্রন্থের সঙ্গে প্রিয়জনের নাম যুক্ত থাকাই বাঞ্চনীয়। মিসির আলির লজিক এই কথাই বলে। কাজেই বইটি গুলতেকিনের জন্য। ------------------------------------------------------
  11. “দিঘির জলে কার ছায় গো “  বইটির উৎসর্গপত্রে লিখেছেন : “কন্যা লীলাবতীকে। এই উপন্যাসের নায়িকা লীলা। আমার মেয়ে লীলাবতীর নামে নাম। লীলাবতী কোনোদিন বড় হবে না। আমি কল্পনায় তাকে বড় করেছি। চেষ্টা করেছি ভালোবাসায় মাখামাখি একটি জীবন তাকে দিতে। মা লীলাবতী : নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।
  12. বলপয়েন্ট নিতাদ বেবী’কে (নিষাদ হুমায়ূন)বাবাকে সে খুব বেশিদিন কাছে পাবে বলে মনে হচ্ছে না।যদি কোন বিষণ্ণ চৈত্রের দিনে বাবার কথা তার জানতেইচ্ছা করে, তখন এই বই সে পড়বে। এবং সে নিশ্চয়ইবলবে, আমার বাবা ছিলেন একজন ‘দুঃখী বলপয়েন্ট’!
  13. হিমু রিমান্ডে জগতের সর্বকনিষ্ঠ হিমুনিষাদ হুমায়ূন-কেহাঁটি হাঁটি পা পা (হিমুর মতো)যেখানে ইচ্ছা সেখানে যা।
  14. পুফি নিষাদ তার নানাজানকে ডাকে মহারাজ।মহারাজ বিড়াল দু’চক্ষে দেখতে পারেন না।তার ফ্ল্যাটে পুফি নামে একটা বিড়াল ছিলোতাকে তিনি অঞ্চল ছাড়া করেছেন। লাভহয়নি, অদ্ভুত অদ্ভুত সময়ে বিড়াল তাঁর ঘরেঢুকে। কেমন করে জানি তাকিয়ে থাকে।বিড়াল বিদ্বেষী মহারাজাইঞ্জিনিয়ার মোহম্মদ আলীশ্রদ্ধাভাজনেষু
  15. দেখা না-দেখা”  “নিষাদ হুমায়ূন, তুমি যখন বাবার লেখা এই ভ্রমণ কাহিনী পড়তে শুরু করবে তখন আমি হয়তোবা অন্য এক ভ্রমণে বের হয়েছি। অদ্ভুত সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কাউকেই জানাতে পারব না। আফসোস!”
  16. বাদশাহ নামদার নিনিত হুমায়ূনআমার কেবলই মনে হচ্ছে পুত্র নিনিত পিতার কোন স্মৃতি না নিয়েই বড় হবে। সে যেন আমাকে মনে রাখে এইজন্যে নানান কর্মকান্ড করছি। আমি ছবি তুলতে পছন্দ করি না। এখন সুযোগ পেলেই নিনিতকে কোলে নিয়ে ছবি তুলি।এই বইয়ের উৎসর্গপত্রও স্মৃতি মনে রাখা প্রকল্পের অংশ।
  17. রাবণের দেশে আমি এবং আমরা বাবা নিনিতআমার সঙ্গে তোমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ।হায় রে! এই স্মৃতি তোমার মনে থাকবে না।
  18. মধ্যাহ্ন  “মেহের আফরোজ শাওন। পরম করুণাময় ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তাকে দিয়েছেন। তার কোলভর্তি নিষাদ নামের কোমল জোছনা। আমার মতো অভাজন তাকে কি দিতে পারে? আমি দিলাম মধ্যাহ্ন। তার কোলে জোছনা, মাথার উপর মধ্যাহ্ন। খারাপ কি?”
  19. চলে যায় বসন্তের দিন” ”আমার একটি খুব প্রিয় গান আছে, গিয়াসউদ্দিন সাহেবেরলেখা ‘মরণ সঙ্গীত’- ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়।‘ প্রায়ই ভাবি আমি মারা গেছি, শবদেহ বিছানায় পড়েআছে, একজন কেউ গভীর আবেগে গাইছে- ‘মরিলেকান্দিস না আমার দায়।‘ ’নক্ষত্রের রাত’ নামের ধারাবাহিক নাটকের শ্যুটিংফ্লোরে আমি আমার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। এবংএকজনকে দায়িত্ব দিলাম গানটি বিশেষ গাইতে।সে রাজি হলো। উৎসর্গপত্রের মাধ্যমে তাকে ঘটনাটি মনেকরিয়ে দিচ্ছি। আমার ধারণা সময় এসে গেছে।মেহের আফরোজ শাওন”
  20. মধ্যাহ্ন প্রথম খন্ড মেহের আফরোজ শাওন।পরম করুণাময় ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তাকে দিয়েছেন। তার কোলভর্তি নিষাদ নামের কোমল জোছনা। আমার মতো অভাজন তাকে কি দিতে পারে? আমি দিলাম মধ্যাহ্ন। তার কোলে জোছনা, মাথার উপর মধ্যাহ্ন। খারাপ কি? 
  21. মধ্যাহ্ন দ্বিতীয় খন্ডবোবায় ধরা নামের একটি জটিল ব্যাধি আমার আছে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মনে হয় বিকট দর্শন জন্তুর মতো কয়েকটি অতিপ্রাকৃত প্রাণী আমার বুকে বসেছে। গলা চেপে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। আতঙ্কে আমি অস্থির হয়ে চিৎকার করতে থাকি। তখন একটা কোমল স্পর্শ আমার কপালে পৌঁছে। গভীর মমতায় একজন বলে, ‘এই তো আমি আছি’। আমার ঘুম ভাঙে, আমি স্বাভাবিক হই।মমতাময়ী শাওনকে।
  22. মানবী মেহের আফরোজ শাওনসুকল্যাণ হাসেপ্রসন্ন হাসি আজদিতে হবে দাসে

বিশেষ মানুষদের:

  1. এই আমি গাজী শামছুর রহমান যিনি নিজে চোখ বন্ধ করে থাকেন কিন্তু আশেপাশের সবাইকে বাধ্য করেন চোখ খোলা রাখতে 
  2. মাতাল হাওয়া কোন মৃত মানুষ মহান আন্দোলন চালিয়ে নিতে পারেন না। একজন  পেরেছিলেন। আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান তাঁর রক্তমাখা শার্ট ছিলো ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি
  3. তেঁতুল বনে জোছনা”   “কিছু মানুষ আছেন যাদের দেখামাত্র মন আনন্দে পূর্ণ হয়, কিন্তু তারা যখন কাছে থাকেন না তখন তাদের কথা তেমন মনে পড়ে না। হায়াৎ ভাই সেই দলের আমার দেখা নিখুঁত ভালো মানুষদের একজন”।
  4. ফাউন্টেনপেন ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান ব্যক্তিগতভাবে আমি এই তরুণকে চিনি না। কিন্তু মুগ্ধ হয়ে তার ক্রিকেট খেলা দেখি। স তার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে। দশজন কিংবা বারোজন না হয়ে ক্রিকেট কেন এগারজনের খেলা?

অভিনেতা-অভিনেত্রী বা গায়কদের:

  1. বহুব্রীহি জনাব আবুল খায়ের অভিনয় যাঁর প্রথম সত্তা অভিনয় যাঁর দ্বিতীয় সত্তা
  2. ভূত ভূতং ভূতৌ ছোট্ট বন্ধুরা, তোমাদের কি কখনো এমন হয় যে কোন একজন কে খুব ভালো লাগে, কিন্তু কখনো মুখ ফুটে ভালোলাআর কথাটা বলতে পারো না? আমার প্রায়ই হয়। আমার এমন একজন ভালো লাগার মানুষ হচ্ছেন ছোট মির্জা আসাদুজ্জামান নূর। মুখ ফুটে তাকে এই কথা বলিনি। আজ বললাম। ছোটদের এই বইটি তার জন্য। 
  3. “যদিও সন্ধ্যা” বইটা অভিনেতা আহমেদ রুবেলকে “অভিনেতা হিসেবে A+, মানুষ হিসেবে A++”।
  4. “তিথির নীল তোয়ালে” বিখ্যাত টেলিভিশন অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে উৎসর্গ করে লিখেছেন, “আমার জানতে ইচ্ছে করে, একজন মানুষ এত ভাল অভিনয় কি ভাবে করেন”।
  5. “হিমুর দ্বিতীয় প্রহর”  “জাহিদ হাসান, প্রিয় মানুষ। মানুষ হিসেবে সে আমাকে মুগ্ধ করেছে, একদিন হয়তো অভিনয় দিয়েও মুগ্ধ করবে। (দ্বিতীয় বাক্যটি দিয়ে তাকে রাগিয়ে দিলাম, হা হা হা!)।
  6. এই মেঘ, রৌদ্রছায়া  ছবি পাড়ায় আমার ছোট্ট একটা অফিস আছে। সেই অফিসে রোজ দুপুরবেলা অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ উপস্থিত হয় এবং হাসিমুখে বলে, ভাত খেতে এসেছি। সে আসলে আসে কিছুক্ষণ গল্প করার জন্যে। ইদানীনং মাহফুজ খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুরবেলা তার হাসিমুখ দেখতে পাই না। মাহফুজ কি জানে, প্রতিদিন দুপুরে আমি মনে মনে তার জন্যে অপেক্ষা করি?
  7. “লিলুয়া বাতাস"  ”দীর্ঘদিন কেউ আমার পাশে থাকে না, এক সময় দূরে সরে যায়। হঠাৎ হঠাৎ এক আধজন পাওয়া যায় যারা ঝুলেই থাকে, যেমন অভিনেতা ফারুক। “লিলুয়া বাতাস” বইটি তার জন্যে। পরম করুণাময় তার হৃদয়ে লিলুয়া বাতাস বইয়ে দেবেন, এই আমার শুভ কামনা। ফারুক আহমেদ। সুকনিষ্ঠেয়।“
  8. হিমুর আছে জল  একজন মানুষকে চেনা যায় যুদ্ধক্ষেত্রে এবং ছবির আউটডোর শুটিং-এ। নিষাদের প্রিয় দাড়িওয়ালা মামাকে। তারিক আনাম খাঁন।
  9. তোমাদের এই নগরে  এ.এফ.এম. তোফাজ্জল হোসেন
    এই মানুষটি জীবনে কোন কিছুই চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেনি নি। তবু তাঁর বন্ধুরা তাঁকে আদর করে ডাকে- চ্যালেঞ্জার।
  10. ”মিসির আলীর চশমা ” গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হইয়াছে অনিমেষ আইচকে। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন: “সম্প্রতি আমি একজনকে পেয়েছি যে বাংলাদেশের বিভিন্ন মানুষদেরকে মিসির আলী হিসেবে নিয়ে আসছে। এবং সবাইকে বাধ্য করছে এদের মিসির আলী হিসেবে ভাবতে। তরুণ পরিচালক অনিমেষ আইচ, মিসির আলি সন্ধানেষু।“
  11. সে আসে ধীরে  মৃত্যুর কাছাকাছি যাবার মতো ঘটনা আমার জীবনে কয়েকবারই ঘটেছে। একবারের কথা বলি। আমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে- আমাকে নেয়া হয়েছে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে। আমি চলে গিয়েছি প্রবল ঘোরের মধ্যে, চারপাশের পৃথিবী অস্পষ্ট। এর মধ্যেও মনে হচ্ছে হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক যুবক আমার পাশে বসে। কে সে? হিমু না-কি? আমি বললাম, কে? যুবক কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, হুমায়ূন ভাই, আমি স্বাধীন। আপনার শরীর এখন কেমন? শরীর কেমন জবাব দিতে পারলাম না, আবারও অচেতন হয়ে পড়লাম। এক সময় জ্ঞান ফিরল। হলুদ পাঞ্জাবি পরা যুবক তখনো পাশে বসা। আমি বললাম, কে? যুবক কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমি স্বাধীন। হিমুর এই বইটি স্বাধীনের জন্যে। যে মমতা সে আমার জন্যে দেখিয়েছে সেই মমতা তার জীবনে বহুগুণে ফিরে আসুক- তার প্রতি এই আমার শুভকামনা।
  12. তন্দ্রাবিলাস  সেলিম চৌধুরী এবং তুহিনমাঝে মাঝে চিন্তা করি- আমার এক জীবনের সঞ্চয় কি? কিছু প্রিয় মুখ, কিছু সুখ স্মৃতি... প্রিয়মুখদের ভেতর তোমরা আছো। এই ব্যাপারটা তোমাদের কাছে কতোটুকু গুরুত্বপূর্ণ আমি জানি না...

কবি সাহিত্যিকদেরঃ

  1. আসমানীরা তিন বোন  উপন্যাসের উৎসর্গপত্রে তিনি লিখেছেন, “আমি একজনকে চিনি যিনি দাবি করেন তাঁর শরীরের পুরোটাই কলিজা। চামড়ার নিচে রক্ত মাংস কিছু নেই, শুধুই কলিজা। এ ধরনের দাবি করার জন্য সত্যি সত্যিই অনেক বড় কলিজা লাগে। প্রণব ভট্ট।“
  2. সেদিন চৈত্রমাস”  ”আমি লক্ষ্য করে দেখেছি অতি বুদ্ধিমান কেউ কখনো ভাল মানুষ হয় না। মারুফ তার ব্যতিক্রম। আচ্ছা তার সমস্যাটা কি?  ̶  কবি  মারুফুল ইসলাম ভালমানুষেষু” ।
  3. লীলাবতী শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাশকবি, আমি কখনো গদ্যকার হতে চাই নি।আমি আপনার মতো একজন হতে চেয়েছি।হায়, এত প্রতিভা আমাকে দেয়া হয় নি।
  4. মৃন্ময়ীর মন ভালো নেই  তিনি সব সময় হাসেন।যতোবার তাঁকে দেখেছি, হাসিমুখ দেখেছি।আমার জানতে ইচ্ছা করে জীবনে কঠিন দুঃসময়ে তিনি যখন কলম হাতে নিয়েছিলেনতখনও কি তাঁর মুখে হাসি ছিলো? সর্বজন প্রিয়আমাদেররাবেয়া খাতুন
  5. সকল কাঁটা ধন্য করে  কবি ফরহাদ মজহার প্রিয়তমেষুকবি-মানুষ যে রাজনীতি নিয়ে জটিল জটিল রচনা লিখেসবাইকে চমকে দিতে পারে- আমার ধারণা ছিলো না।
  6. আনন্দ বেদনার কাব্য  শামসুর রাহমানশ্রদ্ধাষ্পদেষুআমাকে দেখাও পথ ধ্যানী; চোখ বন্ধ ক’রে অন্ধকারে হেঁটে হেঁটেএখন কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো?
  7. জল জোছনা  সমরেশ মজুমদারএকজন বড় মাপের মানুষ।
  8. সে ও নর্তকী  বিমুখ প্রান্তরে সেই সবুজের সমারোহহাসান হাফিজুর রহমানস্মৃতির উদ্দেশ্যে
  9. সানাউল্লাহর মহাবিপদ  ওয়াহিদ ইবনে রেজা(বাপ্পি)বড় কবিরা পারবারিকভাবে অসুখি হন।বাপ্পি একজন বড় কবি এটা জেনে ভালো লাগছে।সে আরো বড় কবি হোক, এই শুভ কামনা।
  10. কালো যাদুকর  জুয়েল আইচজাদুবিদ্যার এভারেস্টে যিনি উঠেছেন।এভারেস্টজয়ীরা শৃঙ্গ বিজয়ের পর নেমে আসেন।ইনি নামতে ভুলে গেছেন।

বন্ধু ও কাছের মানুষদেরঃ

  1. আজ আমি কোথাও যাবো না  মানুষ পৃথিবীতে এসেছে পঞ্চ ইন্দ্রিয় নিয়ে। শোনা যায় কিছু মহাসৌভাগ্যবান মানুষ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিয়েও আসেন। আমার কপাল মন্দ, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দূরের কথা পঞ্চম ইন্দ্রিয়ের এক ইন্দ্রিয় কাজ করে না। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে আমি কোন কিছুর গন্ধ পাই না। ফুলের ঘ্রাণ, লেবুর ঘ্রাণ, ভেজা মাটির ঘ্রাণ... কোন কিছুই না। এদেশের এবং বিদেশের অনেক ডাক্তার দেখালাম। সবাই বললেন, যে নার্ভ গন্ধের সিগন্যাল মস্তিষ্কে নিয়ে যায় সেই নার্ভ নষ্ট হয়ে গেছে। সেটা আর ঠিক হবে না। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে গন্ধবিহীন জগৎ স্বীকার করে নিলাম। কী আশ্চর্য কথা, অল্পবয়স্ক এক ডাক্তার আমার জগতকে সৌরভময় করতে এগিয়ে এলেন। দীর্ঘ পনেরো বছর পর হঠাৎ লেবু ফুলের গন্ধ পেয়ে অভিভূত হয়ে বললাম, এ-কী! যিনি আমার জগৎ সৌরভময় করেছেন, তাঁর নিজস্ব ভুবনে শত বর্ণের শত গন্ধের, শত পুষ্প আজীবন ফুটে থাকুক- এই আমার তাঁর প্রতি শুভ কামনা। ডা. জাহিদ  
  2. তিন বিচিত্র  আমার একজন কার্ডিওলজিস্ট বন্ধু আছেন, তাঁর কাছে যখনি যাই তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেন, “আপনার তো দিন শেষ।“ কোন ডাক্তারজে এড় সহজে দিন শেষের কথা বলতে  আগে শুনিনি। আমি মুগ্ধ! প্রফেসর বরেন চক্রবর্তী ভালোমানুষেষু 
  3. কোথাও কেউ নেই  কাজী হাসান হাবিব হে বন্ধু, হে প্রিয় 
  4. উড়ালপঙ্খী  আমার কিছু বন্ধুবান্ধব আছে সপ্তাহে একবার যাদের মুখ না দেখলে মনে হয় সপ্তাহটা ঠিকমতো পার হলো না। কিছু যেন বাদ পড়ে গেলো। শফিক-উল-করিম 
  5. উঠোন পেরিয়ে দুই পা  পক্ষী বন্ধু সাদাত সেলিম তিনি পাখিদের ভালোবাসেন পাখিরা কি তাঁকে ভালোবাসে?
  6. মিসির আলি আনসলভড  মিসির আলির কিছু স্বভাব আমার মধ্যে আছে। অতি বুদ্ধিমান মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। চ্যানেল আই এর ইবনে হাসান খান তার ব্যতিক্রম। অতি বুদ্ধিমান হলেও তার সঙ্গ আমি অত্যন্ত পছন্দ করি। ইবনে হাসান খান বুদ্ধিশ্রেষ্ঠ 
  7. পুতুল  নীলু, কল্যাণীয়াসু ‘কতো না দিন রাতি তুমি ছিলে আমার খেলার সাথী’
  8. “এবং হিমু”  ”ব্রাত্য রাইসু, যে মাঝে মাঝে হিমুর মতো হাসে।“ 
  9. নীল মানুষ  জলি আবেদিন আড়ালে তাঁকে আমি ডাকি সিস্টার টুয়েন্টি টু ক্যারেট। কারণ তাঁর হৃদয় বাইশ ক্যারেট সোনায় বানানো- কোন খাদ নেই। 
  10.  “হিমুর মধ্যদুপুর”  “নওশাদ চৌধুরী প্রিয়বরেষু। অসম্ভব্ প্র্যাকটিক্যাল একজন মানুষ। মাথায় ব্যবসা নিয়ে নানান পরিকল্পনা। তারপরেও তাঁর মধ্যে আমি হিমুর ছায়া দেখি এবং অবাক হই।“
  11. “বৃষ্টি ও মেঘমালা”  “মধ্যদুপুরে অতি দীর্ঘ মানুষের ছায়াও ছোট হয়ে যায়। অধ্যাপক তৌফিকুর রহমানকে। যাঁর ছায়া কখনো ছোট হয় না। 
  12. “আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি”  “তার নাম রোমেল। আমি তাকে রহস্য করে ডাকি ত্রুস্ক, রাশিয়ান সাবমেরিন ত্রুস্ক, নাবিকদের নিয়ে সাগরে তলিয়ে যাওয়া ত্রুস্ক। রোমেলকে দেখলেই আমার কেন জানি তলিয়ে যাওয়া সাবমেরিনের কথা মনে হয়। সে পড়াশোনা করেছে রাশিয়ায়। রুপবতী এক রাশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেছে। মেয়েটি রাশিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাদের পুতুলের মতো একটা ছেলে আছে। রোমেল তার রাশিয়ান পরিবার নিয়ে পাবনায় বাস করছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ তার মাস্টার্স ডিগ্রি আছে কিন্তু সে জীবন নির্বাহ করছে পত্রিকা বিক্রি করে। আখতারুজ্জামান রোমেল (ত্রুস্ক)”।
  13. চক্ষে আমার তৃষ্ণা  আমার হৃদয় নামক পাম্পিং মেশিনে কিছু সমস্যা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্যে মাঝে মাঝে আমাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে যেতে হয়। তখন এক প্রবাসী গল্পকার ছুটে আসেন। প্রাণপণ চেষ্টা করেন আমাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে। শহীদ হোসেন খোকন স্বস্তিকারকেষু
  14. পারুল ও তিনটি কুকুর  কাকলী প্রকাশনীর নাসির আহমেদ এবং সময় প্রকাশনীর ফরিদ আহমেদ এরা দু’জনেই জানে না এদের আমি কি পরিমাণ পছন্দ করি। একদিন হুট করে মরে যাবো, আমার ভালোবাসার কথা এরা জানবে না। তা তো হয় না। কাজেই এই উৎসর্গপত্র
  15. যখন নামিবে আঁধার খোকন নামের সঙ্গে কীভাবে যেন আমি যুক্ত। চারজন খোকনের সঙ্গে আমার গাঢ় পরিচয় আছে। খোকন সিঙ্গাপুর খোকন নিউ ইয়র্ক খোকন লাস ভেগাস খোকন ঢাকা চার খোকনের এক বই
  16. জলপদ্ম সাধারণ হয়েও অসাধারণ আমার অতি প্রিয় একজন ময়মনসিংহের সালেহ ভাই করকমলে।


পরিচিতদেরঃ

  1. “ছেলেটা”   “আনোভা, এই মেয়ে, আমি তোমার নামের বানান জানিনা। তুমি কেমন, তোমার হাব ভাব কেমন এই তথ্য আমার জানা নেই। তুমি কোনদিন বাংলা শিখবে কিনা, আর শিখলেও আমার বই তোমাকে পড়তে দেয়া হবে কি না তাও জানি না। তাতে কি? এই বইটা তোমার জন্য”। 
  2. হিমু মামা  অমিয় বাবা মা’র হাত ধরে দেশে দেশে ভ্রমিও 
  3. রাক্ষস খোক্কস এবং ভোক্ষস  নিষাদের পাঁচ তলার চাচী এবং  মোটু চাচুকে (এই দু’জন মনে করেন নিষাদ মানব সন্তান না, দেবশিশু। মনে হয় এদের মাথায় কোন সমস্যা আছে।) 
  4. রূপা  তিনি দূর দ্বীপবাসিনী তাঁর পছন্দের জগত, স্টেইনবেকের রহস্যময় জগত। আমার অল্প কিছু কাছের মানুষদের একজন। সালেহা চৌধুরী 
  5. বাসর  স্নিগ্ধা করিম আমার উৎসর্গপত্রগুলি সে খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে। আমি না-কি উৎসর্গপত্রে অনেক মজা করি। তার ধারণা কোন একদিন তাকে একটি বই আমি উৎসর্গ করব। সেখানে অনেক মজার কথা থাকবে। বই উৎসর্গ করা হলো। 
  6. রুমালী  জলি আবেদিন জামাল আবেদিন যুগলেষু। এমন আনন্দময় মানব-মানবী আমি খুব কম দেখেছি। তাঁদের এই আনন্দ দেখেও সুখ।
  7. হিমুর নীল জোছনা  বাষট্টি বছর বয়েসী কঠিন হিমু কেউ কি দেখেছেন? আমি দেখেছি। তার নাম সেহেরী। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। তিনি শুধু যে হলুদ পাঞ্জাবি পরেন তা-না, তিনি নিজের চুল-দাড়ি সবই মেহেদি দিয়ে হলুদ করে রাখেন। পূর্ণিমার রাতে আয়োজন করে জোছনা দেখতে গাজীপুরের জঙ্গলে যান সৈয়দ আমিনুল হক সেহেরী (হিমু, ফার্স্টক্লাস)
  8. হিমু  আয়েশা মোমেন, আপা, আপনি ভালোবাসার যে কঠিন ঋণে আমাকে জড়িয়ে রেখেছেন, সেই ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। ঋণী হয়ে থাকতে ভালো লাগে না, কিন্তু কী আর করা!



বিবিধঃ

  1. বাদল দিনের দ্বিতীয় কদম ফুল  উপন্যাস লেখার একটা পর্যায়ে উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে রক্তমাংসের মানুষ মনে হতে থাকে। তাদেরকে কি বই উৎসর্গ করা যুক্তিযুক্ত না? হেদায়েতের বড় ভাই বেলায়েতকে। 
  2. আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ  বৃক্ষদের! যাদের কারণে গল্পগুলি লেখা হয়েছে 
  3. একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি  Poor FLC-কে। হতদরিদ্র শব্দটির একটি সুন্দর বাংলা আছে, ‘নয়দুয়ারি’।
  4. শুভ্র গেছে বনে  শুভ্রর মতো কাউকে কি আমি চিনি, যাকে এই বই উৎসর্গ করা যায়? না, চিনি না। প্রকৃতি শুদ্ধতম মানুষ তৈরি করে না। কিছু-না-কিছু খাদ ঢুকিয়ে দেয়। এই বই আমার অচেনা সেইসব মানুষের জন্যে, যারা জানেন তাদের হৃদয় শুভ্রর মতোই শুভ্র
  5. হিমুর বাবার কথামালা  মধ্যরাত্রে যাদের সাথে হিমুর দেখা হয়, বইটি তাদের জন্যে।
  6. রোদন ভরা এ বসন্ত  হিমু নামের কেউ যদি থাকতো তাহলে কোন এক জোছনার রাতে  তাকে বলতাম- এই বইটি কেন  আপনাকে উৎসর্গ করা হল বলুনতো? দেখি আপনার কেমন বুদ্ধি!






* তোমাদের জন্য ভালোবাসা - ড: আলী নওয়াব
* নির্বাসন - জরী
* অচিনপুর - নুরুল আনোয়ার এবং আতিকুর রহমান
* সৌরভ - সালেহ চৌধুরী
* এই বসন্তে - হুমায়ুন আজাদ
* একা একা - কোহিনুর খান এবং আসাদুজ্জামান খান
* অমানুষ - কাজী আনোয়ার হোসেন
* প্রথম প্রহর - নওয়াজীশ আলি খান
* আমার আছে জল - কবি নির্মলেন্দু গণ
* দেবী - বিপাশা হায়াত
* ১৯৭১ - অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক
* ফেরা - খালিকুজ্জামান ইলিয়াস
* শীত এবং অন্যান্য গল্প - প্রণবকান্তি বোস
* মহাপুরুষ - তবিবুল ইসলাম বাবু
* নৃপতি - মামুনুর রশিদ
* দূরে কোথাও - আহমেদ হুমায়ুন
* নক্ষত্রে রাত - রশীদ করিম
* অন্যভূবন - নিয়াজ মোর্শেদ
* নিশীথিনী - ওবায়দুল করিম
* অরণ্য - ইমদাদুল হক মিলন
* আকাশ জোড়া মেঘ - রাজা চৌধুরী
* ইরিনা - সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
* অপরাহ্ন - খালেদা হাবিব
* এলবেলে (১ম পর্ব) - ড. আবদুল করিম
* বৃহন্নলা - ডক্টর মুনতাসীর মামুন
* দ্বৈরথ - মোহাম্মদ মাসুম
* সাজঘর - শওকত আলী
* অন্ধকারের গান - ড. সরদার আবদুস সাত্তার
* রজনী - হুমায়ুন ফরিদী
* এইসব দিনরাত্রি - মুস্তাফিজুর রহমান
* একজন মায়াবতী - কাইয়ুম চৌধুরী
* আশাবরী - জাহানারা ইমাম
* কৃষ্ণপক্ষ - অধ্যাপক আবদুল বায়েস ভূঞা
* অনিল বাগচীর একদিন - অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনুস
* অনীশ - শাহাদৎ চৌধুরী
* মিসির আলীর অমীমাংসিত রহস্য - হাফিজুল কবির
* নবনী - আসিফ নজরুল
* জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল স্কুল - সাজ্জাদ শরীফ
(চলবে...)

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন তৈরি করেছেন শূন্য পেজ অ্যাডমিন হুমায়ূন আহমেদ

Post a Comment